আন্দামান ট্যুর প্ল্যানের জন্যে কিছু সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন

কালাপাথর বীচ, হ্যাভলক, আন্দামান দ্বীপ
  • যে কেউ আন্দামান দ্বীপ ভ্রমণের (Andaman Island) যাবার প্ল্যান নিজেরাই করতে পারে। তবে সম্ভব হলে আন্দামানের স্থানীয় এজেন্ট দিয়ে ট্যুর প্ল্যান করুন। এতে সময়ের সাশ্রয় হবে এবং অবশ্যই ভালোভাবে ঘুরতে পারবেন। এটি একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। আপনি যে হোটেলে উঠবেন তাঁদের মাধ্যমেই এজেন্ট এর সন্ধান পেয়ে যাবেন। ওখানকার স্থানীয় এজেন্টরা সবাই ১৯-২০, কাউকেই বেশি ভালো বা খারাপ বলা যাবে না।
  • সাথে ছাতা, মিনারেল ওয়াটার এবং সানস্ক্রিন ক্রীম রাখা মাস্ট। সানস্ক্রিন ক্রীম এবং ছাতা ব্যবহার না করলে ট্যুর থেকে ফেরার পরে কাছের লোকও চিনতে পারবে না 🙈
  • আন্দামানে এলে নিদেনপক্ষে ৯-১০ দিন সময় নিয়ে আসবেন নয়ত আসা বৃথা।
  • আন্দামান যাওয়ার উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি। তার পরেই বাড়তে থাকে গরম।
  • নিজেদের এবং বাচ্চাদের আইডেন্টটি কার্ড ও তার ফটোকপি সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
  • পোর্টব্লেয়ার এ বিভিন্ন রেঞ্জের হোটেল পাবেন। একটি এভারেজ হোটেল এর ভাড়া মোটামুটি ১৫০০ টাকা থেকে শুরু। চেষ্টা করবেন এয়ারপোর্ট বা জংলী ঘাট বা ডলিগঞ্জ এর আশেপাশে থাকার কারণ এই জায়গাগুলি থেকে গাড়ি/অটো সহজলভ্য। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট পাবেন আশেপাশে।
  • বাড়ি থেকে শুধু ফ্লাইট (পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়া-আসার জন্য), হোটেল (পোর্ট ব্লেয়ার, হ্যাভলক আইল্যান্ড, নিল আইল্যান্ড) আর মাক্রুজ ফেরির (পোর্ট ব্লেয়ার থেকে হ্যাভলক আইল্যান্ড, হ্যাভলক থেকে নিল আইল্যান্ড এবং নিল থেকে পোর্ট ব্লেয়ার এর) টিকিট কাটুন। ফ্লাইট আর হোটেল বুকিং যে কোন অনলাইন সাইট থেকে আপনার বাজেট অনুযায়ী কাটুন। মনে রাখবেন যত তাড়াতাড়ি ফ্লাইটের টিকিট কাটা যায় তত ভালো। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারের সময় টিকিটের দাম অনেক বেড়ে যায়।
  • ক্রুজ বুকিং প্রসঙ্গে। দুরকমের ক্রুজ আছে – একটি হল সরকারি, অন্যগুলো বেসরকারি। সরকারি ক্রুজে ভাড়া কম কিন্তু টাইমিং ভালও নয়। আর তাছাড়া মাত্র ৪ দিন আগে বুকিং ওপেন হয়। সবার আগে লোকালদের জন্য সিট রিজার্ভ থাকে। মাত্র কয়েকটি ট্যুরিস্ট দের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে সুতরাং একটু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকেই। কারণ বুকিং না পেলে কোন রাস্তা নেই এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়ার। সরকারী ক্রুজ বুক করতে হলে পোর্টব্লেয়ার এ যে হোটেল এ উঠবেন তাঁদের বলবেন অথবা পোর্ট এর অফিস থেকে নিজে লাইনে দাঁড়িয়ে বুক করতে হবে। বেসরকারি ক্রুজ অনলাইনে বুকিং করা যায় এক মাস আগে থেকে। একটু ভাড়া বেশি (সরকারি ক্রুজ এর সাথে ভাড়ার তফাৎ প্রায় ৫০০টাকার মত) কিন্তু বেশ রিলাক্সিং। টাইমিং ও ভালো। মোটামুটি তিনটি কোম্পানি ভেসেল চালায় এখানে makcruzz, grean ocean এবং coastal cruz. টাইমিং, ভাড়া এবং বুকিং এর বিস্তারিত প্রত্যেকটি ক্রুজ এর ওয়েবসাইটে দেখে নিতে পারেন।
    Makcruzz – http://www.makruzz.com/site/
    Green Ocean – http://greenoceanseaways.com/tickets/portal/
    Coastal Cruz- http://www.bookandamantrip.com/package/coastal-cruise/
  • পোর্ট ব্লেয়ার (Port Blair) এ পৌঁছে আপনি যে কোন ট্রাভেল এজেন্সীর কাছ থেকে সাইটসিং করার গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। চাইলে একটা অটো ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। ট্যুরে লোকসংখ্যা কম হলে পোর্টব্লেয়ার শহর এবং এর আশেপাশে সমস্ত দ্রষ্টব্য গুলি দেখার জন্য একটি অটো রিকশা রিজার্ভ করে নিতে পারেন। এক একটি অটোতে সর্বোচ্চ ৩ জন বসতে পারেন।
  • পোর্ট ব্লেয়ার এ পৌঁছে আগে ওখানকার ট্যুরিস্ট অফিস থেকে জলি ব্যুয় আইল্যান্ড যাবার পারমিট (৫০/- জনপ্রতি) আর টিকিট (৭৫০/- জনপ্রতি) কেটে নেবেন। যারা বারাটাং আইল্যান্ড যাবেন তারা কোনো ট্রাভেল এজেন্সীর কাছ থেকে বারাতাং যাবার বাস (১৮০০/- জনপ্রতি) অথবা প্রাইভেট গাড়ির (৯৫০০/-) বুকিং করে নেবেন।
  • যাঁরা বারাটাং যেতে চান, অবশ্যই ভোরবেলার কনভয় এ যাওয়ার চেষ্টা করুন। হোটেল থেকে মোটামুটি ভোর সাড়ে তিনটে বা চারটে নাগাদ বেরোতে হবে তবেই সাড়ে ৬টার কনভয় এ লাইন দিতে পারবেন। কারণ ভোরবেলায় জাড়োয়া সম্প্রদায়ের মানুষ দেখতে পাওয়ার সুযোগ বেশি।
  • বারাটাং গেলে অবশ্যই লাইম স্টোন গুহাটি দেখে আসবেন স্পীডবোটে। আধঘন্টা সময় লাগবে, প্রতিজন ৭০০টাকা। এক বোটে ১০ জন নেবে। এছাড়াও দেখে আসতে পারেন Mud Volcano। তবে মনে রাখবেন সবকিছুই সেরে নিতে হবে বেলা ৩ টার মধ্যে, কারণ ফেরার সময় ৩ টার কনভয়টাই শেষ কনভয়।
  • যদি নিজেরা প্ল্যান করে যান, হ্যাভলক দ্বীপে ২ দিন থাকুন। দেখে নিন এলিফ্যান্ট বীচ, রাধানগর বীচ, কালাপাথর বীচ।
  • আন্দামানে গিয়ে ওয়াটার স্পোর্টস আর অন্যান্য এক্টিভিটিস অবশ্যই করবেন, তবে নিজের শরীরের অবস্থা বুঝে। স্কুবা ডাইভিং (৩৫০০/- জনপ্রতি) আর সী-ওয়াকিং (৩৫০০/- জনপ্রতি) শুধুমাত্র তাদেরই জন্য যারা কমবয়েসী এবং শারীরিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ। সে তুলনায় স্নর্কেলিং (৫০০/- থেকে ১০০০/-) যে কেউই করতে পারে এবং এটাতে কোনো রিস্ক থাকে না।
  • Glass bottom boat/snorkeling/scuba এগুলি নর্থ বে আইল্যান্ড বা জলি বয় আইল্যান্ড বা এলিফ্যান্ট বীচ (হ্যাভলক দ্বীপ) বা ভরতপুর বীচ (neil island) এ করতে পারেন। তবে যদি জলি বয় দ্বীপ এ একবার করে নেন তবে বাকি জায়গাগুলিতে না করলেও চলবে। অসম্ভব সুন্দর জলি বয়। তবে এলিফ্যান্ট বীচে জলের নিচে আপনার ভিডিও সংগ্রহ করতে পারবেন।
  • গ্লাসবটম বোট, সেমি-সাবমেরিন এ জামাকাপড় ভেজে না।
  • রাধানগর বিচ, এলিফ্যান্ট বিচ, নর্থ বে আইল্যান্ড, জলি বুওয় আইল্যান্ড-এ জামাকাপড় চেঞ্জ করার ঘর আছে | জলের নিচে যদি আপনার ছবি তুলতে চান তাহলে এলিফান্ট বিচে ওরাই তুলে দেবে |
  • নীল এবং হ্যাভলক দ্বীপে থাকা এবং খাওয়ার খরচ সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এটিএমও নেই খুব একটা। থাকলেও নগন্য, তাই সাথে ক্যাশ রেখে দেবেন প্রয়োজন মতো।
  • নীল দ্বীপে ন্যাচারাল ব্রিজটি (হাওড়া ব্রিজ) অবশ্যই সকাল সকাল দেখতে যাবেন ভাঁটার সময়। কারণ বিকেলের দিকে জোয়ার চলে এলে ব্রিজ অবধি যেতে পারবেন না।
Leave a Comment
Share