ছোট সোনা মসজিদ (Choto Shona Masjid) বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ যা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানায় অবস্থিত। ৫০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই মসজিদ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। মধ্যযুগের সুলতানি আমলের গৌড়নগরীর এক ঐতিহাসিক স্থাপনা এই ছোট সোনা মসজিদ। মসজিদটিকে বলা হতো ‘গৌড়ের রত্ন’। মসজিদের বাইরের দিকে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল। সূর্যের আলো পড়লেই তা সোনার মতো ঝলমল করে উঠত। এ জন্যই এর নাম হয়ে যায় সোনা মসজিদ। তবে অযত্নে সোনা মসজিদের সেই সোনালি রং এখন আর নেই। এখন তামাটে রঙে পরিণত হয়েছে।
মধ্যযুগে বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯) নির্মিত হয় সোনা মসজিদ। নির্মাতা হিসেবে ওয়ালী মুহাম্মদের নাম পাওয়া যায়। মসজিদের মাঝের দরজার উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে এ তথ্য জানা যায়। তবে লিপির তারিখের অংশটুকু ভেঙে যাওয়ায় নির্মাণকাল জানা যায়নি। এটি কোতোয়ালী দরজা থেকে মাত্র ৩ কি.মি. দক্ষিণে। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। এটি হোসেন-শাহ স্থাপত্য রীতিতে তৈরি।
মসজিদটি ইট দিয়ে তৈরি। তার ওপর পাথরের একটি স্তর বসানো আছে। মসজিদের বাইরের পরিমাপ ৮২ ফুট বাই সাড়ে ৫২ ফুট; ভেতরের পরিমাপ ৭০ ফুট ৪ ইঞ্চি বাই ৪০ ফুট ৯ ইঞ্চি। উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। মধ্যবর্তী তিনটি নামাজের স্থানে খিলান করা চার খণ্ড ছাদ তৈরি করে মাঝখানে এনে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার দুপাশের প্রতি অংশে আছে ছয়টি করে গোলাকার গম্বুজ। এই বারোটির পাশাপাশি চৌচালা গম্বুজ আছে তিনটি। মাঝখানে অবস্থিত এই চৌচালা গম্বুজগুলোর ভেতরের দিকে গোলাপ ফুলের মতো কারুকার্য করা।
মসজিদের চারদিকে চারটি বুরুজ (স্তম্ভ) রয়েছে। এগুলোর ভূমি অষ্টকোনাকৃতির। বুরুজগুলোতে ধাপে ধাপে বলয়ের কাজ আছে। বুরুজগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশ পর্যন্ত। মসজিদের সামনে পাঁচটি এবং ডানে ও বাঁয়ে দুই পাশে তিনটি করে দরজা রয়েছে। প্রতিটি দরজারই কিনারায় আছে বেশ চওড়া করে খোদাই করা কারুকাজ। তবে তা খুব গভীর নয়, দূর থেকে বোঝা যায় না। দরজার পাশের দেয়ালগুলোতেও খোদাই করা কারুকাজ রয়েছে।
মসজিদের প্রবেশপথের পাথরের তোরণটিও সুদৃশ্য কারুকার্যময়। এই তোরণের সামনেই রয়েছে সেই আমলের সারি সারি কবর। সবই বাঁধানো। দুটি কবর বড় কালো পাথর দিয়ে বাঁধানো। এরপরেই মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চোখে পড়বে আমবাগান।
১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে মসজিদের তিনটি গম্বুজ ও পশ্চিম পাশের দেয়ালের কিছু অংশ বিধ্বস্ত হয়। ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার গম্বুজ ও দেয়ালটি সংস্কার করে। তবে পশ্চিম পাশের ইটের দেয়ালের বাইরের বেশির ভাগ অংশে পাথর স্থাপন করা হয়নি।
ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সন্তানের কবর। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সীমানাপ্রাচীরের ভেতরেই বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হকের কবর।
ঢাকা থেকে সরাসরি কানসাট পর্যন্ত বেশ কিছু বাস রয়েছে যেমনঃ দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীন, ন্যাশনাল, নিউ বিপ্লব ইত্যাদি। এসব বাসে চড়ে যেতে হবে কানসাট এবং নামতে হবে কানসাট বাজার। কানসাট নেমে সকালের নাস্তা শেষ করে লোকাল অটোতে জনপ্রতি ভাড়া গুনে বা চাইলে রিজার্ভ নিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন ছোট সোনা মসজিদ।
ঢাকার কল্যানপুর ও গাবতলী থেকে বিভিন্ন বাস যেমনঃ হানিফ এন্টারপ্রাইজ, মডার্ন এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন প্রভৃতি রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌছে এখান থেকে বিভিন্ন জেলা ও শহরে যাওয়ার বাস পাবেন। মূলত এখান থেকে রাজশাহীর উদ্দেশ্যই মূলত তিন ধরনের বাস ছেড়ে যায়, যেসব হলঃ গেইট লক, সরাসরি ও লোকাল সার্ভিস। এখান থেকে অন্যান্য রুটে চলাচলকারী বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে আছেঃ নবাবগঞ্জ-শিবগঞ্জ, নবাবগঞ্জ-নওগাঁ, নবাবগঞ্জ-নাচোল, নবাবগঞ্জ-রহানপুর।
এছাড়া রাজশাহী থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টা পর পর সোনা মসজিদের দিকে বাস চলাচল করে। এছাড়া কানসাট পৌছে রিক্সা করে মসজিদে যাওয়া যাবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার খুব ভালো হোটেল নেই, তবে একটি 3-Star মানের হোটেল গড়ে উঠেছে (স্কাই ভিউ ইন – 01955668899)। এছাড়া এখান থেকে রাজশাহী যাওয়া যায় অনেক দ্রুত তাই তাই পরিবার নিয়ে এলে রাজশাহীতে চলে যেতে পারেন। রাজশাহীতে থাকার জন্য যেমন সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভালো মানের অনেক হোটেলও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার জন্য মোটামুটি মানের কিছু হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল স্বপ্নপুরী (০৭৮১-৫৬২৫০), হোটেল আল নাহিদ (০১৭১৩-৩৭৬৯০২) ইত্যাদি অন্যতম। ভাড়া পড়বে প্রতি রাত আনুমানিক ২০০ থেকে ১০০০ টাকা।
Leave a Comment