গাজীপুরের ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ির নিকটে অবস্থিত ভাওয়াল রাজার শ্মশান ঘাট। এক সময়ের ঐশ্বর্য ও প্রতাপের প্রতীক এই স্থানটি এখন ধ্বংসের মুখে। সংরক্ষণের অভাবে এই অনন্য স্থাপত্য ক্রমশ বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। ১৮৫১ সালে ভাওয়াল রাজ কালী নারায়ণের সময়ে এই শ্মশান ঘাটের মঠগুলি নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মঠটি নির্মিত হয়েছে ভাওয়াল রাজত্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মেজ কুমার কৃষ্ণ নারায়ণ রায়ের উদ্দেশ্যে। মঠগুলির নির্মাণশৈলী অসাধারণ। চুন সুরকির ব্যবহার, জটিল নকশা এবং কারুকার্য এর সৌন্দর্য বর্ধন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সময়ের প্রবাহে এই সৌন্দর্য ক্রমশ ম্লান হয়ে আসছে।
এক সময়ের গৌরবময় শ্মশান ঘাট এখন উপেক্ষিত এবং অযত্ন-অবহেলিত। চুন সুরকি খসে পড়ছে, দরজা-জানালা ভাঙা, চারপাশে নোংরা পরিবেশ। কিছু পরিবার এখানে বসতি গড়ে তুলেছে, যা এই ঐতিহাসিক স্থানের মর্যাদা হানিকর। সংরক্ষণের অভাবে এই অমূল্য ঐতিহ্য ধ্বংসের পথে।
ভাওয়াল রাজার শ্মশান ঘাট শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি আমাদের গৌরবময় অতীতের একটি প্রতীক। এর সংরক্ষণ আমাদের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক স্থানকে আবার তার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
ঢাকা থেকে গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি এবং শ্মশান ঘাটে যাওয়া অত্যন্ত সহজ, কারণ এটি রাজধানীর নিকটবর্তী। সড়কপথে ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাসে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে জেলা জাজ কোর্ট (রাজবাড়ি) পৌঁছাতে পারেন। সেখান থেকে মাত্র দশ মিনিটের দূরত্বে শ্মশান ঘাট অবস্থিত। রেলপথে যাতায়াত করতে চাইলে ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে জয়দেবপুর গামী কোন ট্রেন যদি জয়দেবপুর স্টেশনে থামে, তা আগে থেকে নিশ্চিত হয়ে নেবেন। জয়দেবপুর স্টেশনে পৌঁছে রিকশা যোগে সরাসরি রাজবাড়ি এবং শ্মশান ঘাট পরিদর্শন করতে পারবেন। এই পথটি সাধারণত ট্রাফিক জ্যাম এড়াতে সহায়ক হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব।
ভাওয়াল রাজার শ্মশান ঘাট আমাদের অতীতের সাক্ষী। এর সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। এই ঐতিহাসিক স্থানের প্রতি উদাসীন থাকলে আমরা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে অস্বীকার করব। সঠিক পদক্ষেপ এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই অনন্য স্থাপত্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত করা আমাদের কর্তব্য।
Leave a Comment