গোল্ডেন রক

গোল্ডেন রক (Golden Rock) মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান এবং পর্যটন আকর্ষণ যা কিয়াইকতিও প্যাগোডা (Kyaiktiyo Pagoda) নামেও পরিচিত। এটি ইয়াঙ্গুন শহর থেকে প্রায় ১৩০ মাইল দূরে, সোমরাজ্যের পূর্ব ইয়োমা পর্বতের পং-লং শৈলশিরায় অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩,০০৯ ফুট উঁচু কিয়াইকতিও পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই প্যাগোডা প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্ত এবং পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এই ঐতিহাসিক প্যাগোডাটি প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে নির্মিত। সোম ভাষায় ‘কিয়াইক’ অর্থ প্যাগোডা, ‘ইথি’ অর্থ ভিক্ষু। তাই, কিয়াইকতিও নামটির অর্থ দাঁড়ায় ‘ভিক্ষুর মাথায় বহন করা প্যাগোডা’। প্যাগোডাটি স্থাপন করা হয়েছে একটি ডিম্বাকৃতির গ্রানাইট বোল্ডারের উপর, যা দেখতে একটি ঝুলন্ত শিলার মতো।

গোল্ডেন রক প্যাগোডাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বিস্ময় হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি ট্রিপএডভাইজার ডট কমের মতে বিশ্বের ‘সবচেয়ে বিস্ময়কর স্থান’ গুলোর একটি। শ্বেদগন প্যাগোডা এবং মহামুনি প্যাগোডার পর এটি মিয়ানমারের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান।

গোল্ডেন রক: প্রকৃতির এক অদ্ভুত বিস্ময়

গোল্ডেন রক এর অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো এর অবস্থান। বোল্ডারটি প্রায় অর্ধেক ভিতের বাইরে ঝুলে রয়েছে। মনে হয়, এটি যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যাবে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি একই অবস্থায় রয়েছে। ভূমিকম্প এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও এই শিলা স্থির রয়েছে, যা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়।

বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, বোল্ডারটি গৌতম বুদ্ধের কেশধাতুর শক্তির কারণে স্থিতিশীল রয়েছে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, এক ভিক্ষু বুদ্ধের কেশধাতু একটি গ্রন্থিতে লুকিয়ে রাখেন এবং তা রাজাকে দান করেন। রাজা তার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে এই প্যাগোডা নির্মাণ করেন এবং কেশধাতুটি এখানে সংরক্ষণ করেন।

গোল্ডেন রঙের রহস্য

গোল্ডেন রক তার উজ্জ্বল সোনালি রঙের জন্য বিখ্যাত। ভক্তরা বিশ্বাসের নিদর্শন হিসেবে বোল্ডারে সোনার পাত লাগিয়ে থাকেন। বছরের পর বছর ধরে এই প্রথার কারণে বোল্ডারটি পুরোপুরি সোনালি রঙ ধারণ করেছে।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান

গোল্ডেন রক বা কিয়াইকতিও প্যাগোডা ধর্মীয় এবং পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ পরিচিত। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত তীর্থ মৌসুমে এটি ঝলমল করে ওঠে। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সময় বোল্ডারটি অপরূপ সৌন্দর্য প্রদর্শন করে। ভক্তরা এখানে ধূপ, মোমবাতি এবং ফলমূল নিবেদন করেন।

বিশেষ অনুষ্ঠান

মার্চ মাসের তবাংয়ের পূর্ণিমা উপলক্ষে এখানে নব্বই হাজার মোমবাতি জ্বালানো হয়। এই উৎসবে ভক্তরা ভগবান বুদ্ধকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। স্থানটি এ সময় আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

গোল্ডেন রকে যাওয়ার উপায়

গোল্ডেন রক বা কিয়াইকতিও প্যাগোডায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন রুট রয়েছে।

  • ইয়াঙ্গুন থেকে: ইয়াঙ্গুন থেকে সরাসরি বাসে করে কিনপুন গ্রামে যাওয়া যায়। সেখান থেকে প্যাগোডার দূরত্ব প্রায় ১০ মাইল। বাস ভ্রমণ সবচেয়ে দ্রুত এবং আরামদায়ক।
  • মাওলামীইন এবং হপা-আন থেকে: প্রতিদিনের বাস সার্ভিস রয়েছে, যা কিনপুন গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যায়।
  • বাগো থেকে: বাগো থেকে প্রায় ২ ঘণ্টার বাস যাত্রা। তবে মাঝে মাঝে বাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।

কিনপুন গ্রাম থেকে পাহাড়ে ওঠার জন্য হেঁটে যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। যারা হাঁটতে চান না, তারা বাসে ৩০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।

গোল্ডেন রক বা কিয়াইকতিও প্যাগোডা একটি ধর্মীয় এবং প্রাকৃতিক বিস্ময়। এটি শুধু একটি শিলার উপর স্থাপিত প্যাগোডা নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক স্থাপত্য। আপনি যদি মিয়ানমারে যান, তবে গোল্ডেন রক দেখতে ভুলবেন না। এর সৌন্দর্য এবং রহস্য আপনার ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Leave a Comment
Share