ল্যাংট্যাং ভ্যালি ট্রেক

ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক (Langtang Valley Trek) নেপাল তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় ট্রেকিং রুট। এই ট্রেকিং রুটে রয়েছে বেশ কিছু চমৎকার ট্রেকিং ডেষ্টিনেশন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ৩৫০০ মিটার উচ্চতায় ল্যাংটাং ভিলেজ, প্রায় ৩৮০০ মিটার উচ্চতায় চারিদিকে বরফের রাজ্য নিয়ে চমৎকার পাহাড়ি বসতি কিয়ানজিন গোম্পা, আছে গোসাইকুন্ড নামে্র হাই আলটিচ্যুড লেক। এছাড়াও আছে জনপ্রিয় ট্রেকিং পিক কিয়ানজিন রি, সেরগো রি, ইয়ালা পিক সহ বেশ কিছু ট্রেকিং পিক যেখানে কোন রকম টেকনিক্যাল ক্লাইম্বিং ছাড়াই প্রায় ৫০০০-৬০০০ মিটার পর্যন্ত উচু চূড়া আরোহন করা যায়। এই ল্যাংটাং রেঞ্জেই আছে ৬৫০০ মিটার উচ্চতার লাংশিসা রি। প্রতি বছর নানা দেশের বহু পর্যটক ল্যাংটাং ভ্যালিতে ট্রেক করতে আসেন।

অল্টিচিউড সিকনেস

হাই অল্টিচ্যুড ট্রেকে অল্টিচিউড সিকনেস (Altitude Sickness) অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই বিষয়টি কখনই মাথা থেকে বাদ দেয়া যাবে না। প্রচুর পানি খেতে হবে আর নিজের উপর অতিরিক্ত প্রেসার দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।

হাইপোথারমিয়া

হাইপোথারমিয়াকে (Hypothermia) বলা যেতে পারে উচ্চতার নিঃশব্দ ঘাতক। সুন্দরবনের রয়াল বেঙ্গল টাইগার বা জিম করবেট এর ‘দ্য ম্যান ইটিং লেপার্ড অফ রুদ্রপ্রয়াগ’- এরা কেউই সোজাসুজি তার উপস্থিতি জানান দিয়ে আক্রমণ করেনা। সকলের অলক্ষ্যে তারা শিকার বেছে নেয়। সাধারণত গ্রুপের সবথেকে দুর্বল, অবাধ্য, গ্রুপের নিয়ম না মেনে চলা বা গ্রুপ থেকে আইসোলেটেড হয়ে পড়া কাউকে। তারপর হঠাতই আক্রমণ, শিকার প্রতিরোধের সময় টুকু পায়না। হাইপথারমিয়ার শিকারের পদ্ধতি অনেকটা একই রকম। হাই অল্টিচ্যুড ট্রেকে Hypoxia (অক্সিজেনের অভাব) আর হাইপথারমিয়া, একের পর এক পর্বতারোহীর প্রাণ নিয়েছে। সামিট করে ফিরে আসা ক্লান্ত পর্বতারোহী অক্সিজেনের অভাবে আরও অবসন্ন হয়ে পড়তে থাকে। দুর্বল করার কাজ করে দেয় Hypoxia, তারপর প্রাণহানির বাকি কাজটা করে হাইপোথারমিয়া।

জামাকাপড় কিংবা প্রস্তুতি

নেগেটিভ ৫ থেকে নেগেটিভ ১০ তাপমাত্রার প্রিপারেশন থাকা লাগবে, বিশেষ করে কিয়াঞ্জিং গুম্পার ৩ দিনের জন্য। দুইটি সামিটেই ভাল ঠান্ডা এবং প্রচণ্ড বাতাস থাকবে। সুতরাং জামাকাপড়ে কোন কম্প্রোমাইজ না করাই উচিত। কাপড় কেমন হওয়া উচিত সে ব্যাপারে জানার জন্য এই ব্লগটি দেখতে পারেন।

ল্যাংটাং ভ্যালি ট্রেক এর সম্ভাব্য ট্যুর প্ল্যান

  • দিন ১ঃ ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু
  • দিন ২ঃ কাঠমান্ডু থেকে সিয়াব্রুবেসি বাই বাস, সিয়াব্রুবেসি – তিওয়ারি ট্রেক।
  • দিন ৩ঃ তিওয়ারি থেকে রিভারসাইড ট্রেক।
  • দিন ৪ঃ রিভারসাইড থেকে কিয়াঞ্জিং গুম্পা ট্রেক।
  • দিন ৫ঃ কিয়াঞ্জিং রি সামিট
  • দিন ৬ঃ সেরগো রি সামিট
  • দিন ৭ঃ কিয়াঞ্জিং গুম্পা থেকে লামা হোটেল ট্রেক।
  • দিন ৮ঃ লামা হোটেল থেকে সিয়াব্রুবেসি ট্রেক।
  • দিন ৯ঃ সিয়াব্রুবেসি থেকে কাঠমান্ডু বাই বাস
  • দিন ১০ঃ রিসার্ভ ডে
  • দিন ১১ঃ কাঠমান্ডু থেকে ঢাকা
ল্যাংট্যাং ভ্যালি ট্রেক রুট। সৌজন্যেঃ kimkim.com

খরচ

খরচ কিন্তু একটি আপেক্ষিক বিষয়। আপনি কিভাবে থাকবেন, কতটা রিলাক্সে ট্রেক করবেন, অন্যান্য খরচ কেমন করবেন তাঁর উপরে টোটাল খরচ কম বেশী হবে। এই পর্বে যেসব খরচ আপনার হবেই সেসব নিয়ে একটা ধারনা দেয়া হবে। এরপর আপনারা নিজ নিজ চাহিদা মত বাজেট করে নিতে পারবেন।

  • প্লেন ভাড়া আপনার বাজেটের প্রায় অর্ধেক। ১ মাস আগে কাটলে ১৭০০০-১৮০০০ এর মাঝামাঝি খরচ হবে। বাই রোডে গেলে খরচ কমবে কিন্তু সময় বাড়বে এবং ভারতের ট্রানজিট ভিসা লাগবে।
  • এবার হচ্ছে থাকার খরচ। কাঠমান্ডুতে ২-৩ রাত থাকতে হবে আপনাকে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৮০০-১০০০ রুপি যাবে দুইজনের। এখানে কত খরচ হবে এটা একান্তই আপনার ব্যাক্তিগত বিষয়। বাকি সাত রাতের জন্য প্রতিদিন জনপ্রতি ২০০ রুপি ধরলে সেফ।
  • এরপর হচ্ছে খাওয়ার খরচ। কাঠমান্ডুতে আপনি দিনে ৩০০-৪০০ রুপিতেও খেতে পারেন আবার হাজার রুপিও খরচ করতে পারেন। এখানে আপনার ৩ দিনের হিসাব আপনার মত করে করতে হবে। তবে ট্রেকে আপনার দৈনিক ১২০০-১৫০০ রুপি খরচ হবে খাওয়ার জন্য জনপ্রতি।
  • টিমস কার্ড এর জন্য আপনার দিতে হবে ৬০০ রুপি আর ল্যাংটাং এরিয়া পারমিট ১৬৯৫ রুপি। এরিয়া পারমিট একেক রিজিওনে একেক রকম। যাওয়ার আগে খোঁজ নিয়ে যাবেন।
  • কাঠমান্ডু থেকে সিয়াব্রুবেসির বাস ভাড়া ৬০০ রুপি, যাওয়া আসা ১২০০ রুপি লাগবে। লোকাল বাস ৪৫০ রুপি তবে জার্ণি অনেক টাফ হয়ে যাবে এটা মাথায় রাখবেন।
  • এয়ারপোর্ট থেকে থামেল যাওয়া আসা আরও ৮০০-১০০০ রুপি ধরতে হবে। এর বাইরে সেফটি মানি কিছু রাখবেন বিপদের জন্য।
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ langtangnepalTrekking