ফতেহপুর সিক্রি (Fatehpur Sikri) শহরটি আগ্রা (Agra) থেকে ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত যা ১৫৬৯ সালের সময়ে সম্রাট আকবরের আনুষ্ঠানিক রাজধানী ছিলো। তবে তা টিকেছিল মাত্র ১৪ বছর। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী হিসেবে ধরা হয় ফতেপুর সিক্রিকে। সারা বছর ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো পর্যটক যেমন আসেন, তেমনি বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে।
ফতেহপুর সিক্রি পুরোটাই পাথুরে জায়গা। এর দুর্গ ও প্রাসাদগুলো রক্তবর্ণের বেলে পাথরের তৈরি। এর প্রধান তোরণদ্বার ‘বুলন্দ দরওয়াজা’ ৫৪ মিটার উঁচু যা এশিয়ার সবথেকে উচু তোরণদ্বার। চারপাশে পরিখা, ভেতরে জলাধার, অট্টালিকা, প্রমোদকুঞ্জ, স্নানাগার, মসজিদ, স্মৃতিসৌধ সবই আছে। এছাড়া আছে দেওয়ান-ই-আম সম্রাটের সিংহাসন, রাজমহীয়সীরা যেখানে বসতেন, দেওয়ান-ই-খাস কারুকার্য খচিত তুরস্ক সুলতানের বাসগৃহ। পাঁচতারা প্রমোদ ভবন পাঁচমহল। আছে অম্বর মহীয়সীর বাসগৃহ মরিয়ম গৃহ। এর বারান্দায়, দেয়ালের গায়ে হিন্দু দেবদেবির মূর্তি আর কবি ফৈজির কবিতা ও শিল্পকলার বিন্যাস।
ফতেহপুর সিক্রিতে রয়েছে তিন ধর্মের তিন রাণীর মহল। ঘুরে দেখতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। সবচেয়ে বড় যে প্রাসাদ সেটা সম্রাজ্ঞী যোধা বাঈয়ের প্রাসাদ।
তবে ফতেপুর সিক্রির নির্মাণশৈলী যেমন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে তেমনি একই সঙ্গে বিস্মিত করে এটার কারণে যে, পাহাড়ের এত ওপরে, এই যে বিশাল স্থাপনা এর নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ আর প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আনা হয়েছিল কোন পথে।
ফতেহপুর সিক্রিতে রয়েছে জামে মসজিদ যেখানে একসঙ্গে দশ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারে। নামাজের সময় হলের একটা বিশেষ দেয়াল আছে যার গায়ে হাত দিয়ে আঘাত করলে ঢপঢপ শব্দ হতো আর তা শুনেই সম্রাট আকবর নামাজ আদায় করতে আসতেন। সেই দেয়ালটিতে এখনও আঘাত করলে শব্দ হয় একই রকম। ফতেপুর সিক্রিতে দুটি দরজা একটির নাম বুলন্দ দরওয়াজা অন্যটি বাদশাহী দরওয়াজা। অনুপম ভাস্কর্যমণ্ডিত বুলন্দ দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করলে সামনেই জামে মসজিদ।
ফতেপুর সিক্রির উত্তর দিকের দেওয়ান-ই-খাস মহলটি সম্রাট আকবরের ইবাদতখানা। এখানেই আকবর বিভিন্ন ধর্মের বোদ্ধাদের ধর্মবিষয়ক আলোচনার জন্য ডাকতেন। যেখান থেকেই আসে দীন-ই-ইলাহির ধর্মচিন্তা।
ছনের ঘরের আকৃতির সেলিম চিশতির মাজারটি সাদা শ্বেত পাথরে তৈরি। এর গায়ে মানুষ তাদের মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য সুতা বেঁধে রাখে। এই মাজারের নিচ দিয়ে নাকি সুড়ঙ্গ পথ আছে যা দিয়ে দিল্লি পৌঁছানো যেত। কিন্তু এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।
ফতেহপুর সিক্রি যেতে হলে আপনাকে আগে আগ্রা যেতে হবে। আগ্রা থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় ফতেহপুর সিক্রি থেকে। সাত সিটের জাইলো গাড়ীতে আগ্রা থেকে ফতেহপুর সিক্রি পর্যন্ত যাওয়া আসা ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৩০০ রুপী।
কলকাতার শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে আগ্রা যাবার সরাসরি ট্রেনের মধ্যে আছে – উদ্যান আভা তুফান এক্সপ্রেস, যোধপুর এক্সপ্রেস, আগ্রা ক্যান্ট চম্বল এক্সপ্রেস, শিয়ালদহ-উদয়পুর অনন্যা এক্সপ্রেস।
কলকাতা থেকে বাজেট অনুযায়ী ট্রেন কিংবা প্লেন বাছাই করে খুব সহজেই দিল্লী যাওয়া যায়। রাজধানী এক্সপ্রেস, দুরন্ত এক্সপ্রেসসহ বেশ অনেকগুলো এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে কলকাতা টু দিল্লী। থ্রি টায়ার এসি সীটের ভাড়া ২০৭০ রুপী থেকে শুরু। স্লিপার ক্লাসে ভাড়া পড়বে ৬১০ রুপী এর কাছাকাছি। সময় লাগবে ১৪-১৮ ঘন্টা।
দিল্লী থেকে আগ্রা মাত্র ২০০ কি.মি.। আপনি চাইলে ট্যাক্সি ভাড়া করে দিল্লী থেকে আগ্রা যেতে পারেন। ৭ সিটের জাইলো গাড়ী পেয়ে যাবেন ২৫০০-৩০০০ রুপির মধ্যে। এছাড়া বাস কিংবা ট্রেনেও যেতে পারেন।
দিল্লী থেকে সকাল্বেলার গতিমান, শতাব্দী বা তাজ এক্সপ্রেস ধরে চলে যান আগ্রা ক্যান্টনমেন্ট। ওখান থেকে প্রি-পেইড ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে যেতে পারেন কিংবা যেতে পারেন আগ্রার তাজমহল দেখতে।
ফতেহপুরে রাতে থাকার কোন দরকার পড়ে না কারন আগ্রা থেকে দিনে দিনেই ঘুরে এসে আগ্রাতেই রাত্রি যাপন করা যায়। আর রাত্রিযাপন করার জন্যে আগ্রাতে রয়েছে হাজারো অপশন, হাজারো চয়েজ। বাজেট হোটেল থেকে বিলাসবহুল সব রকমের হোতেল পেয়ে যাবেন আগ্রাতে।
আগ্রা ভ্রমণের প্রধান আকর্ষন থাকে তাজমহল। তাই সবাই চেষ্টা করে তাহমহলের কাছে দূরে হোটেল নেয়ার।
Leave a Comment