আইফেল টাওয়ার

আইফেল টাওয়ার (Eiffel Tower) পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিস্ময়কর এই স্থাপনাটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে অবস্থিত। WTO (World Tourism Organization) – এর বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র ফ্রান্স। আর ফ্রান্স এই সর্বোচ্চ পর্যটন নগরীতে পরিণতি হওয়ার পেছনে সবচেয়ে গুরুতপূর্ণ অবদান রেখেছে যেই স্থাপনাটি তা হলো আইফেল টাওয়ার। কেননা প্রতিবছর প্রায় ৭ মিলিয়নের ও বেশি পর্যটক আইফেল টাওয়ার দেখতে প্যারিসে ভ্রমণ করে। প্যারিসের সবচেয়ে উঁচু এই স্থাপনাটি সত্যিই ভালো লাগার মতো। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত এই টাওয়ারটি প্রতি ঘন্টায় ৫ মিনিটের জন্য একবার করে আলোক-সজ্জায় ঝলমল করে উঠে। রাতের আঁধারে আলোক ঝলমলে এই টাওয়ারটির অপরূপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে যে কেউ। অসম্ভব চমকপ্রদ এই টাওয়ারটি নিয়ে লেখা হয়েছে নানান ভ্রমণ গল্প, রচিত হয়েছে অসংখ্য ছন্দ  ও কবিতা। তাছাড়াও এই আইফেল টাওয়ার নিয়ে লেখালেখি করেছেন স্বনামধন্য বহু কবি-সাহিত্যিক, অনেকেই আবার প্রকাশ করেছেন তাদের আবেগ-ঘন অনুভূতির কথা। সব মিলিয়ে আইফেল টাওয়ার সত্যিই বিস্ময়কর একটি স্থাপনা। ১৯৯১ সালে আইফেল টাওয়ার বিশ্বের সবচেয়ে ঐতিহ্যপূর্ণ শীর্ষ স্থাপনা হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে। সুউচ্চ বিশাল আকৃতির এই টাওয়ারটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ফরাসি বিপ্লবের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মূলত ফরাসি বিপ্লবকে কেন্দ্র করেই এই টাওয়ারটির উত্থান। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মেলার উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করা হয়েছিল আইফেল টাওয়ারটি। এই টাওয়ারটির সাথে জড়িত আছে শত বছরের ইতিহাস , লুকিয়ে আছে হাজারো স্মৃতি। 

আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য

আইফেল টাওয়ারের আরেক নাম “ট্যুর আইফেল”। ফরাসি ভাষায় এই টাওয়ারটিকে ট্যুর আইফেল নাম অভিহিত করা হয়েছে। তাছাড়াও ফ্রান্সের মানুষের কাছে এই টাওয়ারটি মূলত ট্যুর আইফেল নামেই ব্যাপক পরিচিত। বিশাল আকৃতির সুউচ্চ এই টাওয়ারটির নির্মাতা গুস্তাভো আইফেল। তিনিই এই টাওয়ারটির নকশা নির্মাণ করেন। গুস্তাভো আইফেল পেশায় ছিলেন একজন প্রকৌশলী। রেল সেতুর নকশা নির্মাণ করাই ছিল তার প্রধান পেশা। গুস্তাভো আইফেল এই টাওয়ারটির ছাড়াও “স্ট্যাচু অব লিবার্টি” এর নির্মাণ পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নকারী। একসময় আইফেল টাওয়ার ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু পরিকাঠামো। কিন্তু পরবর্তীতে ক্রাইসলার ভবনটি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের (তৎকালীন) সবচেয়ে উঁচু স্থাপনার তালিকায় আইফেল টাওয়ারের পরিসমাপ্তি ঘটে। আর পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনার তালিকায় জায়গা করে নেয় ক্রাইসলার ভবনটি। তবে তাই বলে কিন্তু আইফেল টাওয়ারের জনপ্রিয়তা কোনো অংশেই কমে যায় নি। কেননা প্রতিটি প্রাচীন নিদর্শনেরই রয়েছে নিজস্ব স্বতন্ত্র, রয়েছে কিছু নিজস্ব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও। ১৯৩০ সালে আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে ক্রাইসলার ভবনটি নির্মিত হওয়ার আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ আইফেল টাওয়ারই ছিল পৃথিবীর একমাত্র সুউচ্চ পরিকাঠামো। 

কথিত আছে, আইফেল টাওয়ার নির্মাণে ১৮,০৩৮ টি ধাতব খন্ডকে একত্রে সংযুক্ত করণের জন্য ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৫০ লক্ষ নাট ব্যবহৃত হয়েছিল। আর এই কাজে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ৩০০ জন দক্ষ কর্মীকে। বিশাল আকৃতির এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ নির্মাণ করতে মোট সময় লেগেছিল ২ বছর ২ মাস ৫ দিন। অনেকেই বলে থাকেন আইফেল টাওয়ারের মোট উচ্চতা ৩২৪ মিটার। এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন , আসলে মূল আইফেল টাওয়ারটির উচ্চতা ৩০০ মিটার আর বাকি চার মিটার হচ্ছে আইফেল টাওয়ারের উপর নির্মিত এন্টেনার উচ্চতা। অর্থাৎ ৩০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট আইফেল টাওয়ারের উপর রয়েছে ৪ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট একটি এন্টেনা। আর এই এন্টিনাসহ টাওয়ারটির মোট উচ্চতাকেই মূলত সবাই (বেশিরভাগ লোকজন) আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এছাড়া টাওয়ারটিকে আলোক-সজ্জায় চমৎকার ভাবে  উপস্থাপনের জন্য টাওয়ারটিতে ৩৩৬ টি প্রজেক্টর সহ ২০,০০০ টি বাতি সংযুক্ত করা হয়েছে। আর রাতের আঁধারে সু-সজ্জিত এই বাতি গুলোর দীপ্তমান আলোর কারণেই টাওয়ারটির এত জনপ্রিয়। আইফেল টাওয়ার নির্মাণে ব্যবহৃত ধাতব কাঠামো সমূহের ওজন ৭,৩০০ টন , আর অন্যান্য সব মিলিয়ে টাওয়ারটির মোট ওজন ১০,১০০ টন। প্রতি ৭ বছর পর পর এই টাওয়ারটিকে একবার করে রং করা হয়। সম্পূর্ণ এই টাওয়ারটি রং করতে প্রতিবার ৬০ টন রঙের প্রয়োজন হয়। রং করা সহ টাওয়ারটির সংস্করণ মূলক বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজেই কর্তৃপক্ষকে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফ্রান্স ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯ টিরও বেশি প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে এই টাওয়ারটির। তবে এই প্রতিকৃতি গুলোর মধ্যে নেভাদা , মেক্সিকো ও শেনঝেনে স্থাপিত প্রতিকৃতি গুলো সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। তবে আসল আইফেল টাওয়ারের সাথে কিন্তু এগুলোর কোনোটিরই তুলনা চলে না। মূল আইফেল টাওয়ারটিতে মোট ১২০ টি তরঙ্গায়িত এন্টেনার উপস্থিতি রয়েছে। তাছাড়াও বিশাল আকৃতির চমকপ্রদ এই স্থাপনাটি তৈরী করতে প্রায় ৭,৮০০,০০০ গোল্ড ফ্রাঙ্কস ব্যয় হয়েছিল।

আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে কিছু চমকপ্রদ তথ্য

এই টাওয়ারটি কখনো কখনো প্রকৃত উচ্চতার চেয়েও আরো বেশি লম্বা দেখায়। এই ঘটনাটি ঘটে মূলত লোহার দৈর্ঘ্য সম্প্রসারণের ফলে। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে , কোনো কঠিন পদার্থকে তাপ প্রদান করা হলে তা আয়তনে বৃদ্ধি পায়। আর ঠিক এই ঘটনাটিই ঘটে আইফেল টাওয়ারের ক্ষেত্রে। তবে তা কিভাবে ? চলুন জেনে নিই – গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে টাওয়ারটির ধাতব কাঠামো সমূহের ধাতব সম্প্রসারণ ঘটে। অর্থাৎ টাওয়ারটিতে ব্যবহৃত লোহার দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। আর এই কারণেই টাওয়ারটিকে কখনো কখনো প্রকৃত উচ্চতার চেয়েও কিছুটা বেশি উঁচু মনে হয়। এছাড়াও টাওয়ারটি মাঝে মাঝে সূর্যের তাপে লৌহ সম্প্রসারণের কারণে কিছুটা হেলে পড়ে। ফলে আইফেল টাওয়ার কখনো কখনো আবার বিদীর্ণ রূপও ধারণ করে বটে।

আইফেল টাওয়ারে যাতায়াত ব্যবস্থা

টাওয়ারটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস শহরে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই সহজ। তবে পর্যটন মৌসুম গুলোতে ট্রাফিক জ্যামের কারণে সেখানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা বিরক্তি অনুভূত হতে পারে। কেননা ফ্রান্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে বেশির ভাগই প্যারিসে অবস্থিত হওয়ায় সেখানে অনেক পর্যটক ভীড় জমায়। আর এ কারণেই পর্যটন মৌসুমে অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি ট্রাফিক জ্যাম লক্ষ্য করা যায় এই শহরে। তাই বিশেষ করে পর্যটন মৌসুমে প্যারিস ভ্রমণের উদ্দেশ্য থাকলে কিছুটা বেশি সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান তৈরী করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আইফেল টাওয়ারের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্টেশনের নাম ” দ্য চ্যাম্প্ ডি মার্শ ট্যূর আইফেল মেট্রো স্টেশন্ “। আইফেল টাওয়ার থেকে এই স্টেশনে হেঁটে যেতে সময় লাগে ১৫-২০ মিনিটের মত।

আইফেল টাওয়ার সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আইফেল টাওয়ার কখনো বন্ধ থাকে না। বছরের পুরো সময় জুড়েই মুখরিত থাকে আইফেল টাওয়ার নগরী। তবে আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা ও নির্দিষ্ট সময়সূচী রয়েছে। নিম্নরূপ তা সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো –

নির্দেশনাঃ

আইফেল টাওয়ারে আলোকসজ্জা প্রদর্শনের সময় বিনা অনুমতিতে ছবি ধারণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের নির্ধারিত সময়সূচী

  • ১৫- ই জুন থেকে ১-লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সময় সকাল ৯ টা থেকে মধ্যে রাত্রি পর্যন্ত। তবে নির্ধারিত তারিখ ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় সাধারণত সকাল ১০ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত টাওয়ারটি পরিদর্শনে ভিতরে যাওয়া যায়।
  • পর্যটন মৌসুমে (সাধারণত বসন্তকাল ও কৃষ্টমাসের সময়) দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়।

আইফেল টাওয়ারের টিকেট দুটি উপায়ে সংগ্রহ করা যায়। প্রথম পদ্ধতিটি হলো সরাসরি আইফেল টাওয়ার থেকে টিকেট সংগ্রহ করা। অন্যথায় দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো অনলাইনের  মাধ্যমে আইফেল টাওয়ারের টিকেট সংগ্রহ করা। মূলত এই দুটি পদ্ধতিই আইফেল টাওয়ারের টিকেট সংগ্রহ করণের বর্তমান কার্যকর উপায়। আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের জন্য কোনো নির্ধারিত ধার্যমূল্য নেই। বরং আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের জন্য প্রয়োজনীয় টিকেটের ধার্যমূল্য নির্ধারিত হয় পরিদর্শনকারীর বয়সের হিসাব অনুযায়ী। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় হচ্ছে চার বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কোনো প্রবেশমূল্য পরিশোধ করতে হয় না। নিচে কিছু টিকেটের ধার্যমূল্য উল্লেখ করা হলো –

সিঁড়ির সাহায্যে আইফেল টাওয়ারের নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায়  উড্ডয়নের ক্ষেত্রে :

  • ৪-১১ বছরের শিশুদের জন্য জনপ্রতি ৩.০০ ইউরো।
  • ১২-২৪ বছর বয়সী পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ৩.৫০ ইউরো।
  • আর প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ৫.০০ ইউরো করে পরিশোধ করতে হবে।

লিফটের সাহায্যে আইফেল টাওয়ারের নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায়  উড্ডয়নের ক্ষেত্রে :

  • ৪-১১ বছরের শিশুদের জন্য জনপ্রতি ৪.০০ ইউরো।
  • ১২-২৪ বছর বয়সী পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ৭.০০ ইউরো।
  • আর প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ৮.৫০ ইউরো করে পরিশোধ করতে হবে।

লিফটের সাহায্যে আইফেল টাওয়ারের নিচ তলা থেকে সর্বোচ্চ তলায় উড্ডয়নের ক্ষেত্রে :

  • ৪-১১ বছরের শিশুদের জন্য জনপ্রতি ১০.০০ ইউরো।
  • ১২-২৪ বছর বয়সী পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ১৩.০০ ইউরো।
  • আর প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য জনপ্রতি ১৪.৫০ ইউরো করে পরিশোধ করতে হবে।

অনলাইনে টিকেট সংগ্রহ করতে: https://www.toureiffel.paris/fr

বিঃদ্রঃ বয়সভেদে টিকেটের এই ধার্যমূল্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো সময় পরিবর্তীত হতে পারে।

আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়

আসলে বছরের পুরো সময় জুড়েই আইফেল টাওয়ার পরিদর্শন করতে আসে বহু পর্যটক। ভোরের আলো ফুটার পর থেকে দিনের পুরোটা সময় জুড়েই যেন পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো রূপ নেয় এই আইফেল টাওয়ার নগরীতে। তবে আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সবচেয়ে সেরা সময় হচ্ছে কৃস্টমাস-ডে উপলক্ষ্য ছুটির দিন গুলো। কৃস্টমাস-ডে ছাড়াও শরৎকাল ও বসন্তকালকেও আইফেল টাওয়ার পরিদর্শনের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর তাই সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী এই সময়টাতেই ভীড় জমায় আইফেল টাওয়ার দেখতে। আসলে রোমান্টিক এই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনাটির সৌন্দর্য লিখে কিংবা বলে বোঝানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় , প্রকৃত এই সৌন্দর্যকে সত্যিকার অর্থে জানার ইচ্ছে থাকলে একবার যেতে হবে একবার যেতে হবে সেই স্বপ্নের নগরীতে। আর তাই তো বছরের পুরোটা সময় জুড়েই অসংখ্য ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে আইফেল টাওয়ার নগরী।

সংক্ষিপ্তভাবে আইফেল টাওয়ার সম্পর্কিত অজানা কিছু তথ্য
  • পৃথিবীতে টাকা দিয়ে পরিদশর্নকারি স্থানগুলির মধ্যে আইফেল টাওয়ার সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষ আকৃষ্ট করে।
  • আইফেল টাওয়ারে প্রায় কুড়ি হাজারটি ৬ ওয়াট বালব রয়েছে। এই বালবগুলো সূর্যাস্তের পরে প্রতি ঘণ্টায় প্রথম পাঁচ মিনিটের জন্য sparkling করে। আগে রাত একটা অবদি এই blinking দেখা যেতো কিন্তু ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ‘এনার্জি সেভিং প্ল্যান’ অনুযায়ী শেষ sparkling রাত ১১টা অবদি করা হয়েছে। রাত ১১:৪৫ এ টাওয়ারে সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।
  • ১৮৮৯ সালে ফ্রেঞ্চ রেভোলিউশনের একশো বছর উপলক্ষ্যে একটি বিশ্বমেলার আয়োজন করা হয়। এই বিশ্বমেলার প্রবেশদ্বার হিসাবে এই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের সময় এটিকে সাময়িক গঠন হিসাবে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে বেতার মাধ্যম এবং পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকলে ধ্বংসের চিন্তা বাতিল করা হয়।
  • গুস্তাভ আইফেল প্রথমে স্পেনে টাওয়ারটি নির্মাণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু এত বিশাল নির্মাণকে অদ্ভুদ ভেবে স্পেন সরকার সেটা প্রত্তাখ্যান করেন।পরবর্তীকালে প্যারিসে টাওয়ার নির্মাণ কাজের সময় স্থানীয় মানুষ এই বিশাল কালো রঙের নির্মাণকে অশুভ বলে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই আইফেল টাওয়ারই পর্যটকদের আকৃষ্ট করার প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • ১৯৪০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন জার্মানি প্যারিস শহর দখল করে নেয় তখন ফ্রান্সের মানুষ আইফেল টাওয়ারের লিফটের তারটি কেটে দেন যাতে হিটলারের নাৎসি সেনা তাদের পতাকা টাওয়ারের উপরে লাগাতে না পারে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষকালে যখন জার্মানি হারের মুখে এসে দাঁড়ায় তখন অ্যাডলফ হিটলার আইফেল টাওয়ার ধ্বংস করার নির্দেশ নেয়। কিন্তু হিটলারের এক সেনা তার আদেশ অগ্রাহ্য করে এবং তার ফলস্বরূপ টাওয়ারটি আজও ফ্রান্সের ঐতিহ্যরূপে দাড়িয়ে আছে।
  • টাওয়ারটি প্রায় দশ হাজার টন ওজনের এবং পুরোটাই লোহা দিয়ে তৈরি। এই বিশাল লৌহ নির্মাণকে মরিচার হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেক সাত বছর অন্তর এটিকে পঞ্চাশ টন পেইন্ট দিয়ে রং করা হয়।
  • এই রং পুরো স্থানীয় সংস্কৃতির রীতি মেনে হয়। কোনরকম মেকানিকাল পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় না। হাতের সাহায্যেই রং করা হয়। আজ অবদি আঠারোবার এটিকে রং করা হয়েছে।
  • আইফেল টাওয়ারের জনপ্রিয়তা এতো বেশি যে পৃথিবীতে তিরিশটিরও বেশি দেশে (যেমন জাপান, আমেরিকা ইত্যাদি) এর রেপ্লিকা দেখা যায় যা পর্যটকদের দৃষ্টি আর্কষণ করে।
  • আইফেল টাওয়ারের নির্মাণকারী গুস্তাভ আইফেল, টাওয়ারের একহাজার ফুট উচ্চতায় (তৃতীয় তলায়) নিজের জন্য একটি প্রাইভেট ঘর তৈরি করেন। এই ঘরটিতে থমাস এডিসনের মতো বিখ্যাত মানুষের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তাই এইসব বিখ্যাত মানুষদের আবিষ্কারের কিছু নিদর্শন বর্তমান পর্যটকরা ঘরটি পরিদর্শনের সময় দেখতে পারেন।
  • ইংল্যান্ড সরকার এই বিশাল টাওয়ারের ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লন্ডনে ১৮৯১ সালে আইফেল টাওয়ারের থেকেও উচু একটি টাওয়ারের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু টাওয়ারের ভিতের সমস্যার জন্য ১৯০৭ সালে সেটিকে ধ্বংস করে ফেলা হয়।
  • এতো সুন্দর নিদর্শনের ছবি রাতের বেলা তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ধরা হয়। কারণ ফ্রান্স সরকার টাওয়ারের আলোকসজ্জাকে নিজের কপিরাইট হিসাবে মনে করে।
  • আইফেল টাওয়ার নির্মানের কৃতিত্ব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার গুস্তাভ আইফেলকে দেওয়া হয়। কিন্তু আসলে মরিস কোয়েচলিন (যিনি বলিউড অভিনেত্রী কালকি কোয়েচলিনের প্রপিতামহ) এবং এমিলে নৌগোরকে (Emile Nouguier) এই টাওয়ারের সৃষ্টিকর্তা বলা হয়ে থাকে।
  • এরিকা নামক এক মহিলা নিজের দাম্পত্য জীবন থেকে বিরক্ত হয়ে ২০০৭ সালে আইফেল টাওয়ারের সাথে বিয়ে করে নেন। পরবর্তীকালে এই মহিলা নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এরিকা লা ট্যুর আইফেল।
  • গরমকালে রেললাইনের মতো আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা প্রায় ছয় ইঞ্চি বেড়ে যায় এবং সূর্যের উল্টোদিকে প্রায় সাত ইঞ্চি বেকে যায়।
  • এই বিশাল নির্মাণটি যদি উপরে উঠে উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে ১৬৬৫ ধাপ সিড়ি পেরোতে হবে। প্রথম আর দ্বিতীয়তলা লিফট, সিড়ি দুভাবেই যাওয়া যায়। কিন্তু তৃতীয়তলা উঠতে লিফটের ব্যবহার করতেই হবে। প্রথমতলাতে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট এবং বসার জায়গা করা আছে যেখান থেকে পর্যটকরা প্যারিস শহরের মনোরম ভিউ উপভোগ করতে পারেন।
লেখকঃ তানভীর রহমান সাইম
Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Eiffel Towerfranceparis