ডালহৌসি ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের চাম্বা জেলায় অবস্থিত একটি মনোরম শৈলশহর। ১৮৫৪ সালে সেনাবাহিনী ও সরকারি পদাধিকারিকদের গ্রীষ্মাবকাশ যাপনের জন্য ব্রিটিশ সরকার এই শহরের পত্তন ঘটান। শহরটি ভারতের তৎকালীন গভর্নর লর্ড ডালহৌসির নামাঙ্কিত। শহরটি পাঁচটি শৈলশিখর নিয়ে গঠিত। হিমালয়ের ধৌলাধর পর্বতশ্রেণির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই শহর চতুর্দিকে মনোরম তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা পরিবেষ্টিত। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,০০০-৯,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। স্কটিশ ও ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের বাংলো ও গির্জা এই শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য। খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত একাধিক মন্দির এই শহরের দ্রষ্টব্য।
গির্জাঃ যেহেতু ডালহৌসি, ব্রিটিশদের একটি গ্রীষ্মকালীন পশ্চাদপসরণ ছিল, সেই কারণে এখানে বেশ কয়েকটি গির্জা দেখতে পাওয়া যায়। সেন্ট জন’স গির্জা ও সেন্ট ফ্রান্সিস গির্জা, সেন্ট প্যাট্রিকস্ গির্জা, সেন্ট আ্যন্ড্রুস্ গির্জা ইত্যাদি গির্জাগুলিতে পর্যটকরা পুর্নবার পরিদর্শনে আসে।
দৈনকুন্ড শৃঙ্গঃ শৃঙ্গটি ডালহৌসি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং এটি পদভ্রমণকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। পর্যটকরা একবার শৃঙ্গটিতে পৌঁছে গেলে সমগ্র অঞ্চলটির এক অত্যাশ্চর্য্য প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে ধন্য হয়ে যায়।
খাজ্জিয়ারঃ ডালহৌসি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি একটি ছোট শহর। এই স্থানটি “ভারতের ক্ষু্দ্র সুইজারল্যান্ড” বা “মিনি সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া”- ডাকনামটি অর্জন করেছে। নির্মল হ্রদ, অত্যাশ্চর্য চারণভূমি ও অরণ্য পর্যটকদের প্রলুব্দ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট। এখানে খাজি নাগকে উৎসর্গীকৃত একটি পুরানো মন্দির রয়েছে যা দ্বাদশ শতকে নির্মিত বলে মনে করা হয়।
কালাটপ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যঃ অভয়ারণ্যটি ডালহৌসি এবং ছাম্বা শহরের মধ্যে অবস্থিত এবং এটি পর্যটকদের এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের মনোরম দৃশ্য নিবেদন করে। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরণের বন্য প্রাণী যথা ভল্লুক, কালো হিমালয়ান মার্টেন, হরিণ, চিতা, সেরো, বার্কিং গরাল, শৃগাল, কাঠবিড়ালি, লাঙ্গুর ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
মে থেকে সেপ্টেম্বর ডালহৌসি (Dalhousie) শহরে ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়।
ডালহৌসির সব থেকে কাছের যোগাযোগ ব্যবস্থা হল পাঠানকোঠ। বিমানে বা ট্রেনে যেতে চাইলে পাঠানকোঠ পর্যন্ত যেতে পারবেন। পাঠানকোঠ বিমানবন্দর থেকে ডালহৌসির দূরত্ব ৮৯ কিলো যা বাসে খুব সহজেই চলে যাওয়া যায়।
ডালহৌসিতে থাকার জন্যে ভিন্ন ভিন্ন বাজেটের ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। ডালহৌসি প্যালেস হোটেল (+৯১৯৪১৮০ ৮৯২০৮) এবং হোটেল মেহার’স, এক শালীন সাশ্রয়ী মূল্যের থাকার জায়গা। মাঝারি মানের থাকার জায়গা হিসাবে রয়েছে – হোটেল প্রেসিডেন্ট ও স্বল্প বাজেটের হোটেলের মধ্যে রয়েছে – হোটেল গ্রেস মাউন্ট (+৯১ ১৮৯ ৯২৪ ০৮৮০)। অন্যদিকে, ডালহৌসিতে আমোদ (+৯১৯৮৭৩১ ৫৯৪৭০) ও স্নো ভ্যালি রিসোর্ট এর মত রিসোর্ট রয়েছে যা অনেক ব্যয়বহুল।
এখানে ডালহৌসির বেশ কিছু হোটেলের বিস্তারিত পাবেন।
ডালহৌসিতে রেস্তোঁরার প্রধান খাবার হল মোমো (ডাম্পলিংস)। বার্গারের জন্য, কোয়্যালিটি রেস্তোঁরার দিকে এগিয়ে যান এবং বেশ কিছু অদ্ভূত খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে নাপোলিতে চলে যান। একদিকে চৌগান রেস্তোঁরা ছাম্বার বিশিষ্ট খাবার পরিবেশন করে, অন্যদিকে ক্যাফে ডালহৌসির খাদ্য তালিকায় প্রায় প্রতিটি ভারতীয় ও চীনা খাবারের সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
Leave a Comment