চুইখিম

চুইখিম (Chuikhim) স্থানটি ভারতের কালিম্পং জেলার দক্ষিন প্রান্তে প্রায় ৩৫০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত একটি ছোটো নিরবিলি গ্রাম। একদম শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, সবুজে ঘেরা পাহাড়, পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা সূর্যোদয় ও সাথে সূর্যাস্ত, চা বাগান ও দুর্দান্ত পাহাড়ের ভিউ, এই নিয়েই চুইখিম। কালিম্পং এর এই ছোট গ্রামটির স্থানটির স্থানিয়দের বসবাসের সংখ্যাও খুব বেশি নয়, কমবেশি ২০০-২৫০টি পরিবারের বসবাস এই ছোট গ্রামটিতে যাদের বেশীরভাগ লোক জীবিকা নির্ভর করে চাষাবাদ করে।

বাগরাকোট থেকে লাভা লোলেগাঁও যাওয়ার পথে পাহাড়ের কোলে সবুজে ঢাকা একটি ছোট্ট গ্রাম হল চুইখিম। শিলিগুড়ি থেকে ওথলাবাড়ির সাড়ে চার কিলোমিটার আগে বাম দিকে টার্ন নিয়ে আড়াই কিলোমিটার গেলে পাবেন বাগরাকোট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল (বাগরাকোট)। বাগরাকোট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ডানদিকে টার্ন নিয়ে ঘন জঙ্গলের বুকচিরে সামান্য অফরোডিং করে পৌঁছে যাওয়া চুইখিম। পথের ধারে পাবেন দেখা মিলবে লিস নদীর, তবে ছুঁতে পারবেন না। দূর থেকে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলা লিস দেখতে দেখতেই এগিয়ে চলতে হবে গন্তব্য পর্যন্ত। হলিডে ডেস্টিনেশন হিসাবে পাহাড়ের কোলে মুক্ত প্রকৃতির মাঝে নির্জঞ্ঝাট কয়েকটা দিন কাটানোর জন্য চুইখিমের কোনো বিকল্প নেই। চুইখিমের অনন্য সৌন্দর্য আপনার মন কাড়তে বাধ্য।

এনজেপি স্টেশন ও শিলিগুড়ি থেকে চুইখিম এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটারের কাছাকাছি, যার ফলে যারা শিলিগুড়ির আশেপাশে পাহাড়ে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য অফবিট স্থান খুঁজে থাকেন, তাঁদের জন্যে একটি সেরা অপশন হতে পারে এটি। মন খুলে শান্ত নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশে ২-৩ টা দিন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবেন। এখানে ঘুরতে এলে দেখতে পাবেন এক অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, শান্ত পাহাড়ি গ্রামের পরিবেশ, সবুজ চা বাগান। এছাড়াও যারা পাখি প্রেমী তাদের তাদের কাছে এই স্থানটি ভালো লাগবে কারন এখানে দেখতে পাবেন নানা ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির হিমালায়ান পাখি ও প্রজাপতি। এছাড়াও এই সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য যা যা করতে পারেন তা হল –

  • সুন্দর এই গ্রামটি পায়ে হেটে ঘুরে দেখুন।
  • পাখি দেখতে বের হতে পারেন।
  • গ্রামের ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করুন।
  • গ্রামের মধ্যে বয়ে চলা লিস নদীর ধারে ঘুরে আসুন।
  • হোমস্টের কাউকে সাথে নিয়ে পাহাড়ে জঙ্গলের মাঝে ছোট একটা ট্রেক করে আসতে পারেন।
  • এই স্থানের খুব কাছে অবস্থিত ইয়েলবং – উত্তরবঙ্গের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এই সুন্দর স্থানটিও ঘুরে আসতে পারেন।
চুইখিম ভ্রমনের সেরা সময় কোনটি?

বছরের প্রায় সব দিন এখানে যাওয়া যেতে পারে, তবে রাস্তার অবস্থা খুব ভালো না হওয়ায় বর্ষাকালে এখানে গেলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ নিশ্চিন্তে যাওয়া যেতে পারে চুইখিম। আর যাঁরা চ্যালেঞ্জ ভালোবাসেন তাঁরা বর্ষাতেও যেতে পারেন।

কালিম্পং থেকে চুইখিমের দূরত্ব কত কিলোমিটার?

কালিম্পং শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি।

চুইখিম যাওয়ার উপায়

চুইখিম পৌছনোর জন্য আপনারা সরাসরি কোন শেয়ার গাড়ি পাবেন না। যার কারনে আপনাদের শিলিগুড়ি থেকে বা এনজেপি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে হবে। গাড়ি ভাড়া পরবে প্রায় ৩০০০-৩৫০০ রুপী, পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা।

এছাড়া আপনারা নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। নিউ মাল জংশন থেকে এই স্থানের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিমি, সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা ও ভাড়া পরবে আনুমানিক ১৫০০-২০০০ রুপী।

গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে টাটা সুমো, টাটা গোল্ড, মাহিন্দ্রার বড় ও শক্তিশালী গাড়ির কথা। ছোট গাড়ি যায় না। টর্চ, মোমবাতি-দেশলাই, মুড়ি ও বিস্কুট, কফি ও টি ব্যাগ, গরম জলের ফ্লাস্ক ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। চাইলেই এসব পাবেন না। কারণ, কোনও দোকান নেই।

কোথায় থাকবেন

চুইখিম একটি অফবিট (Offbeat Destination) ছোট গ্রাম ফলে এখানে থাকার জন্য খুব ভালো মানের হোটেলের সুবিধা পাবেন না। এখানে স্থানীয়রা তাদের বাসভবন গুলি হোমস্টে হিসেবে ব্যাবহার করে, ফলে এখানে থাকার জন্য আপনারা হোমস্টে পেয়ে যাবেন। নিচে কিছু হোমস্টে এর নাম ও নাম্বার দেওয়া হলো, আপনারা চাইলে তাঁদের সাথে যোগাযোগ করে বুক করে নিতে পারবেন।

Humro Home09733071716
Chukihim Homestay8509945575
Vailey View Homestay7031518397/9563664825

এই মুহূর্তে গোটা পাঁচেক হোমস্টে আছে। খরচও নাগালের মধ্যে। ১০০০/১৫০০ এর মধ্যে দিনপ্রতি জনপ্রতি থাকা ও খাওয়া (ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার)। তাজা ও সুস্বাদু শাকসবজি, ভাত, রুটি, পুরি, ডাল, মোমো, পকোড়া, চিকেন ও ডিম পাবেন ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনারে। আর উৎসবের মরসুমে গেলে সেল রুটি খেতেই হবে আপনাকে।

Leave a Comment
Share