বনগাঁও

বনগাঁও (Bangaon) শহরটি ভারতের ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত। এই শহরটি বাংলাদেশীদের কছে এর ট্রেন স্টেশনের জন্যে খুব পরিচিত এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে। এখানে মখমলের মত ঘাস জন্মায়, নিবিড় গাছপালায় নির্জনতা ছড়িয়ে থাকে স্টেশনের চারপাশে। শিয়ালদা স্টেশন থেকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে পূর্ব রেলের এই প্রান্তিক স্টেশনটি তেমন বড় কোনো রেল স্টেশন না হলেও একটি স্টেশনে যা যা থাকা উচিত এখানে তার সবই আছে। পর্যাপ্ত ছাউনী সহ তিনটি প্ল্যাটফর্ম, বসবার ব্যবস্থা, যথেষ্ট পানীয় জল ও শৌচাগার প্রভৃতি যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্যের সমস্ত উপকরণই এই স্টেশনে আছে। এমনকি বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য পৃথক শৌচাগারের ব্যবস্থাও এখানে আছে। পাঁচটি টিকিট কাউন্টার, দুটি ফুট ওভারব্রিজের পাশাপাশি যাত্রীদের টিকিট কাটার সুবিধার জন্য এই স্টেশনে রয়েছে ৪টি এ টি ভি এম মেশিন।

শিয়ালদা-বনগাঁ, বারাসাত-বনগাঁ, রানাঘাট-বনগাঁ, বনগাঁ-ক্যানিং, বনগাঁ-মাঝেরহাট এবং বনগাঁ-লালগোলা লোকালে এই স্টেশনে আসা যায়। শিয়ালদা থেকে বনগাঁও স্টেশনে ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেসের মত আন্তর্জাতিক মানের ট্রেন এই জংশনের ওপর দিয়েই যাতায়াত করে।

ইছামতী নদী এই শহরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে আর রেখে গেছে ভারতের স্বাধীনতার এক করুণ ইতিহাস। বর্তমানে এটি ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত শহর। এই শহরটি ভারতের সব থেকে বড় স্থল বন্দর এবং পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য সীমান্তবর্তী এলাকা। এই স্থল বন্দরটি বনগাঁ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে।

বনগাঁর কাছে পারমাদন জায়গাটি বিখ্যাত, অমর কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত অভয়ারণ্যের জন্য। তাঁর পৈত্রিক বাড়িও ইছামতীর পাড়ে ব্যারাকপুরের শ্রীপল্লীতে। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি, ইছামতী নদীর গা ঘেঁষে শিমুল, অর্জুন, শিশু, শিরীষ গাছের ভিড়ে হারিয়ে যেতে হলে আপনাকে যেতে হবে পারমাদনের জঙ্গলে। স্বল্প সময়ে মনোরম প্রাকৃতিক শোভার সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য যাওয়া যায় বনগাঁর কাছে গোপালনগর এ অবস্থিত বারাকপুরের বিভূতিভূষন ঘাটে। সঙ্গে দেখে নেওয়া যায় নদীর ওপর বিভূতিভূষন সেতুটি।

বনগাঁ এলাকার অন্যতম দ্রষ্টব্য বনগাঁ স্টেশন থেকে পাঁচশ মিটার দূরে রামনগর রোডের লোকনাথ মন্দির। লোকনাথ ব্রহ্মচারীর জন্মতিথিতে পূন্যার্থীদের ভিড় এখানে লক্ষ্য করার মত। এছাড়াও মতিগঞ্জের চাকদহ রোডে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত শহীদ স্মৃতি মিনার ও ত্রিকোণ পার্ক বনগাঁর অন্যতম স্থানফলক। এছাড়াও সাতভাই কালীতলায় একটি প্রাচীন কালী মন্দিরে প্রতি বছর পৌষ মাসে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম হয়। এখানকার রেলব্রিজ ও কালীমন্দিরটিও বনগাঁ শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের রচিত ‘নীলদর্পন’ নাটকের নামাঙ্কিত বনগাঁর নীলদর্পণ অডিটোরিয়ামও সমান উল্লেখযোগ্য। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য, নীলদর্পণ-এর রচয়িতা দীনবন্ধু মিত্রের বাড়ি ও ভারতের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়-এর বাড়িও বনগাঁ শহরের অন্যতম দ্রষ্টব্য।

যাওয়ার উপায়

বেনাপোল পোর্ট এর কাজ শেষ করে বর্ডার ক্রস করে ভারতের পাশের পেট্রোপোল থেকে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে অটোতে করে বনগাঁও রেলস্টেশন চলে যেতে পারবেন। অটোতে ভাড়া পড়বে ৩০ রুপি করে। তারপর বনগাঁও রেলস্টেশন থেকে কলকাতার শিয়ালদাহ রেলস্টেশন যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২০ রুপি করে। তবে মনে রাখবেন, এই ট্রেনে প্রচুর ভীড় হয় এবং লোকাল ট্রেন। তাই যারা সস্তায় বা লো বাজেটে ট্রাভেল করতে চান শুধু তাদের জন্যেই এটা সেরা অপশন। ফ্যামিলি নিয়ে বা যারা একটু রিলাক্সে ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্যে এটি সেরা চয়েজ অবশ্যই নয়।

Leave a Comment
Share