বাহামাস দ্বীপপুঞ্জ (The Bahamas) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বে, কিউবা ও হিস্পানিওলা দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত প্রায় ৭০০টি দ্বীপ ও হাজার খানেক “কি” (Cay – এক ধরনের ক্ষুদ্র বালুময় দ্বীপ) নিয়ে গঠিত একটি শৃঙ্খলাকার দ্বীপপুঞ্জ। কমনওয়েল্থ অভ বাহামাস নামে সরকারীভাবে পরিচিত দেশটি কমনওয়েল্থ অভ নেশন্সের একটি স্বাধীন সদস্য। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান, জলবায়ু ও ভূগোল এটিকে পর্যটকদের একটি জনপ্রিয় গন্তব্যস্থলে পরিণত করেছে। উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের কাছে অবস্থিত হওয়ায় সারা বছরই এখানকার জলবায়ু খুব মৃদু। এখানে নীল সমুদ্রের পাশে অনেক সুন্দর সুন্দর সমুদ্রসৈকত অবস্থিত। এখানকার মুদ্রার নাম বাহামিয়ান ডলার, তবে আমেরিকান ডলারও চলবে।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে যখন আমেরিকাতে আসেন, তখন প্রথম যে স্থানটিতে তিনি অবতরণ করেছিলেন তা ছিল বাহামা দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ। কলম্বাস দ্বীপটিকে স্পেনের সম্পত্তি বলে দাবী করেন এবং এর নাম দেন সান সালবাদোর। ১৭১৭ সালে এটিকে ব্রিটিশ উপনিবেশ করা হয়।
দেশটির রাজধানী নাসাউ (Nassau)। একে নিউ প্রভিডেন্সও বলা হয়। ২১ বাই ৭ মাইলের এই দ্বীপটা প্রশান্তির এক বিমূর্ত মূর্তি যেন। এর লাগোয়া আরেকটি ছোট্ট দ্বীপের নাম হল প্যারাডাইজ আইল্যান্ড। নামেই যার পরিচয়। দুটি দ্বীপের মাঝে এখন একটি সেতু আছে। সেই সাথে ফেরী সার্ভিস তো আছেই। মানুষের ভিড়ে ভারাক্রান্ত হলেও জায়গাটি এখনো পর্যটক আকর্ষণ হারায়নি বিন্দুমাত্র। ক্যাবল বিচ (Cable Beach) এর সাদা বালি আকর্ষণ করে ভ্রমণ পিপাসুদের। এখানে বিচ ছাড়াও ঘুরে দেখার মত আছে অনেক কিছু। কেনাকাটা করতে পারেন, রেস্টুরেন্টে স্বাদ নিতে পারেন স্থানীয় খাবারের, যাদুঘরগুলোয় ঘুরে আসতে পারেন, দেখতে পারেন ডাউনটাউন এবং বে স্ট্রিটের ক্যান্ডি রঙের কলোনিয়াল বাড়িগুলো। পশুপ্রেমীরা ব্লু লেগুন আইল্যান্ড (Blue Lagoon Island) এ ডলফিনদের সাথে কাটিয়ে আসুন একটি দিন।
বাহামা এর বীচগুলো বিখ্যাত এর নীল রঙের জন্য। নীলের এমন সৌন্দর্য অন্য কোথাও চোখে পড়েনা। এর কারণ হল, পৃথিবী’র সবচে’ বড় প্রবাল প্রাচীর বাহামায়। প্রবাল প্রাচীর বা দ্বীপের পানি এমনিতেই অনেক নীল হয়। আর নাসা’র সূত্র মতে বাহামার পানি সবচেয়ে পরিস্কার। বাহামার সমুদ্রে খালি চোখেই পানির ২০০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়।
বাহামাসের পূর্ব দিকে No Take Zone হিসেবে রয়েছে Exuma Cays Land and Sea Park। এটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। পার্কটির অন্তর্গত সমূদ্র সীমায় শ্বাস্রুদ্ধকর সুন্দর সব দৃশ্যের দেখা মেলে। স্বচ্ছ নীল জলের নীচে সাদা বালিতে প্রতিফলিত হয় সূর্যের আলো। পানির রঙ এত স্বচ্ছ যে আপনি এর তলের সব কিছুই দেখতে পাবেন। ভেসে চলা মাছেরা পানিতে ভাসছে নাকি উড়ে বাড়াচ্ছে বোঝা দায়! ডাইভিং এর জন্য জায়গাটি বিশেষ জনপ্রিয়। সুন্দর আবহাওয়ায় এখানে স্নোরকেলিং করে আপনি ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পাবেন তেমনি স্পস্ট যেমনি দেখতে পান পানির ওপরে। তবে এখানে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ।
নাসাউ ডাউন টাউন (Nassau Downtown) – এই যায়গাটিই নাসাউ এর প্রাণকেন্দ্র। শপিংমল, বানিজ্য কেন্দ্র, অফিস আদালত সব এখানেই অবস্থিত। নাসাউ ডক (এর আরেক নাম প্রিন্স উইলিয়াম রাফট) ও এখানেই। অন্য সব যায়গা থেকে এখানে বাস সার্ভিস আছে। বাসগুলোকে বলে ‘জিটনি’। যেখানেই যান, ভাড়া সোয়া এক টাকা।
নাসাউ স্ট্র মার্কেট (The Nassau Straw Market) – বাহামিয়ান কুটির শিল্পের এই হাটে পাওয়া যায় হরেক রকম হস্তশিল্প। মুখোশ, মিনি বঙ্গো (বাহামিয়ান ড্রাম), কৃষ্ণচুড়ার পাতায় তৈরী অ্যালবাম, ঝিনুকের মালা… আরও কত কি!
আটলান্টিস প্যারাডাইস আইল্যান্ড (Atlantis Paradise Island) – বিলাসিতার সকল আয়োজনে পূর্ণ এই হোটেলটি। অভিজাত হোটেলরুম, ওয়াটার পার্ক, বিনোদন কমপ্লেক্স কি নেই এখানে! হোটেলের অতিথিরা বিনামূল্য জনপ্রিয় ১৪১ এডভেঞ্চারে প্রবেশ করতে পারবেন। বিশাল এই অঞ্চলে রয়েছে নানান মজার আয়োজন। দেখা হবে সামুদ্রিক নানান প্রাণী যেমন হ্যামারহেড শার্ক এর সাথে। কেনাকাটা, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি সুবিধা তো রয়েছেই। এ যেন আদিম সমুদ্রের সাথে আধুনিক সভ্যতার মিতালি। প্যারাডাইজ আইল্যান্ড এর মূল বীচ তিনটি। ক্যাবেজ বীচ, রক পয়েন্ট বীচ (গুডম্যান বে তে) আর পাইরেট বীচ। সবগুলো বীচ ই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট মন্ডিত। তবে সবখান থেকেই দেখা যায় বাহামার অপার নীলের হাতিছানি।
রোজ আইল্যান্ড (Rose Island) – নাসাউ’র মূল ভূখন্ড থেকে অনেকটা বাইরে একটা চিলতে দ্বীপের নাম রোজ আইল্যান্ড। রোজ আইল্যান্ড যাবার পথে চোখে পড়ে আটলান্টিকের স্বল্প গভীরতায় প্রবাল প্রাচীর। এখানে পানি এত পরিস্কার যে খালি চোখেই প্রায় ২০০ ফুট গভীরে দেখা যায়। চ্যানেল ধরে এগিয়ে যেতে যেতে চোখে পড়ে অনেক কুমারী দ্বীপ। কোন বসতি নেই এগুলোতে। চাইলে আপনিও কিনে নিতে পারেন এমন একটি দ্বীপ।
প্লেনে যাওয়া ও ফিরে আসাতেই খরচ হবে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাথে যদি ৫ দিন থাকেন তবে হোটেল ভাড়া ও খাওয়া-দাওয়া বাবদ খরচ হবে ১ লাখ টাকা। তাই নুন্যতম সাড়ে চার লাখ টাকা দরকার হবে।
Leave a Comment