আউলি

আউলি (Auli) যেখান থেকে ভারতের উত্তরাখণ্ডের নীলকণ্ট, মানা পর্বত, নন্দা দেবীর ‘ধবল শিখর’-এর সৌন্দর্যে নিজেকে বুঁদ করে রাখতে পারবেন। ২৮০০ মিটার (৯১৮৬ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত এই হিল ষ্টেশন এর বরফ মোড়া পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের হাতছানি। সর্বনিম্ন ৫০০ রুপী দিয়ে বরফের সময় আপনি স্কিইইং করতে পারবেন। তবে আউলি সাধারনত শীতকালে পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয় তার শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের কারনে। আউলি ভ্রমনের আরেকটি সেরা আকর্ষন এখানকার ক্যাবল কার। রোপওয়ে চেপে আউলি ভ্রমণ যেন একটা ম্যাজিক। ৫ নম্বর টাওয়ারের পর থেকে হিমালয় উন্মুক্ত হয়ে আছেন। আস্তে আস্তে টাওয়ার নম্বর যত বাড়বে ততই চোখের সামনে আসবেন নন্দাদেবী, দ্রোণাগিরি, ত্রিশূল, নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লি। চোখের সামনে একের পর এক পিক উন্মুক্ত হতে দেখে আছন্ন হয়ে পড়েতে হয়, এ যেন স্বপ্নের থেকেও অনেক সুন্দর। সকালে-বিকালে অলস পায়ে পাহাড়ি পথের আঁকেবাঁকে ঘুরে বেড়ানো, ভোরবেলা লজের বারান্দা থেকে দিনের প্রথম আলোয় পাহারচুড়োর রংবদল আর সন্ধ্যায় সোনাঝরা সূর্যাস্তের মায়াবি আলোয় পাখিদের ঘরে ফেরা দেখতে দেখতে কেটে যাবে দুদিন।

GMVN লজের পাশেই একটা হনুমানজির মন্দির আছে। চেয়ার লিফট পয়েন্টের সামনের গেট দিয়ে গেলে কম সিঁড়ি ভাঙতে হয়। এখান থেকে নন্দাদেবি, ত্রিশুল, কামেট, দুনাগিরি, গৌরি আর হাতি পর্বত, নিলকান্ত পিকগুলো দেখা যায়।

আউলির রোপওয়ে হচ্ছে গিয়ে এশিয়ার দীর্ঘতম (৩.৭৫কিমি) তথা উচ্চতম আর গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় উচ্চতম। এক থেকে দশ এই ১০টি টাওয়ার, আউলিতে যাঁরা থাকবেন তাঁরা ৮নম্বর টাওয়ারে নেমে যেতে পারেন, কারণ এখানেই আউলির রিসোর্ট। আরো দুটো টাওয়ার পেরোলে আউলির বিখ্যাত ‘গরসন বুগিয়াল’। এই অলি শীতকালে স্কিইং ও আইস স্কেটিংয়ের ideal destination. এমনকি এখানে স্কেটিং শেখানোর স্কুলও আছে। ভাড়া পাওয়া যায় শীতের পোশাক, স্কিইংয়ের সরঞ্জাম আর গাইড।

আউলি রোপওয়ে পয়েন্ট

আউলি রোপওয়ে যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লাগেজ ম্যানেজমেন্ট। বেশি মালপত্র নিয়ে কেবল কারে যাতায়াত করা বেশ অসুবিধাজনক। সঙ্গে গাড়ি থাকলে বেশিরভাগ মালপত্র গাড়িতে রেখে যথাসম্ভব কম লাগেজ নিয়ে যাওয়া উচিত হবে। গাড়ি না থাকলে যোশিমঠের হোটেলের ক্লকরুমেও মালপত্র রাখা যেতে পারে। সমস্ত মালপত্র কখনোই নেবেন না। আউলি গেলে অনেকেই রোপওয়ে চেপে, ঘুরে ফিরে আসেন। কিন্তু যদি সম্ভব হয় এক রাত থাকুন। বরফ না পেলেও থাকুন, অন্য কোন অধরা রূপ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

বদ্রীনাথ যাওয়ার পথে অথবা হেমকুন্ড, ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস যাওয়ার পথে আউলি দেখে নেওয়া যায়। কেবল কারে চেপে আকাশপথে আউলি ভ্রমণ চিরকাল মনে থেকে যাবে।

ভ্রমণের সেরা সময়

আউলি সাধারনত শীতকালীন এক্টিভিটির জন্যে সেরা গন্তব্য। শীতকালীন অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস এবং বরফের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার জন্যে এখানে সাধারনত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণের সেরা সময় ধরা হয়।

কিভাবে যাবেন

যোশীমঠ (Joshimath) থেকে রোপওয়ে চেপে আউলি যাওয়া যায় যা আউলি ভ্রমণের প্রধান আকর্ষনও বলা চলে। রোপওয়ে চেপে যেতে সময় লাগবে ২৫ মিনিটের মতো। ভাড়া মাথাপিছু ৭৫০-১০০০ রুপী। সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ঃ৩০ টা পর্যন্ত এই সার্ভিস চালু থাকে। প্রতি ২৫ মিনিট অন্তর এই ক্যাবল কারগুলির ছেড়ে যায়। ৫ বছরের নিচের বাচ্চাদের ভাড়া লাগেনা। এখানে একটা কেবিনে ২৫জন যেতে পারে, একজন চালকও থাকে। ভেতরে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। হাঁটু থেকে ছাদ অবধি পুরোটাই স্বচ্ছ কাঁচের, তাই বাইরের দৃশ্য দেখতে কোন বাধা নেই।

যোশীমঠ থেকে আউলি রোপওয়ে সময়সূচী

রোপওয়ের যাত্রাপথে মোট ১০ টা টাওয়ার। GMVN SKI RESORT কিংবা AULI RESORT (Alpine Hut) এ যেতে গেলে ৮ নং টাওয়ারে নামতে হবে। তারপর টাওয়ারের ঘোরান লোহার সিঁড়ি বেয়ে নেমে আবার চেয়ার লিফটে চেপে ৫ মিনিটের জার্নিতে GMVN পৌছাতে হবে। চেয়ার লিফট না নিয়ে হেঁটেও যাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে প্রায় দেড় কিমি ট্রেক করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় প্রথমেই ১০নং টাওয়ারে আউলি টপে চলে যাওয়া। প্রায় ২৫ মিনিটের রোমাঞ্চকর যাত্রাপথ। এখানে বরফে চলার জুতো, লাঠি ইত্যাদি চাইলে ভাড়ায় পাবেন। নির্দিষ্ট রেট কিছু নেই – দরাদরি করে নিতে হবে। খাবারের দোকান আছে, তবে দাম বেশ চড়া। বরফের রাজ্যে সময় কাটিয়ে ফিরে যেতে পারেন যোশিমঠে কিংবা আউলিতে রাত্রি যাপন করতে চাইলে পায়ে হেঁটে চলেযান ৮ নং টাওয়ারের কাছে। সেইখান থেকে চেয়ার লিফটে চেপে GMVN এর রিসোর্ট। এই চেয়ার লিফটের জন্যে ৩০০ রুপীর মতো অতিরিক্ত গুনতে হবে।

কাছাকাছি বিমানবন্ধর আছে দেহরাধুন যা আউলি থেকে ২৯৮ কিলোমিটার দূরে। কাছাকছি রেলষ্টেশন হলো ২৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হৃষীকেশ। যোশিমঠ থেকে নির্দিষ্ট সময় পরপর লোকাল বাস ছাড়ে আউলির জন্য। কেউ চাইলে তাতেও আসাযাওয়া করতে পারেন। এছাড়া ট্যাক্সি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

যোশিমঠ থাকতে চাইলে রোপওয়ে পয়েন্টের কাছে তিন-চারটে হোটেল আছে। সাধারণ মানের। তবে পরিষ্কার ঘর, লাগোয়া বাথরুম, গীজার ইত্যাদি আছে।ভাড়া পরবে ঘরপ্রতি ১১০০ রুপী। রোপওয়ে পয়েন্টে এখান থেকে ১ মিনিটের হাঁটাপথ। হোটেলগুলোর কোনটাতেই খাওয়ার ব্যবস্তা নেই। সামনেই রাস্তার ওপর দুপাশের দুটো দোকানের একটাতে আমিষ, অন্যটাতে নিরামিষ পাওয়া যায়।

আউলিতে থাকার জন্যে GMVN এর স্কি রিসোর্ট ছাড়াও কয়েকটি রিসোর্ট ও লজ আছে। এর মধ্যে ক্লিফটপ রিসর্টটি বেশ ভালো তবে ব্যয়বহুল। লজের মধ্যে দেবিদর্শন লজটি ভালো, ভাড়াও খুব বেশি কিছু নয়। তবে সবদিক থেকে বিচার করলে GMVN এর বিকল্প নেই। সাথে বয়স্ক লোক থাকলে বুকিং করার সময় চেয়ার লিফট পয়েন্টের সামনের কটেজ নেওয়া উচিত হবে।

Leave a Comment
Share