ময়মনসিংহ

চেচুয়া বিল

ময়মনসিংহ শহরের কোলাহল থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে, ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চেচুয়া বিল (Cecuya Bil), যা এখন শাপলা বিল নামেই বেশি পরিচিত। প্রায় ২০ একর আয়তনের এই বিলটিতে যতদূর চোখ যায়, সবুজের মাঝে লাল শাপলার রক্তিম আভা মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য সৃষ্টি করে। যেন প্রকৃতি নিজ হাতে বিছিয়ে রেখেছে ফুলের বিছানা। সাদা ও বেগুনি শাপলার সাথে ভাসমান কচুরিপানার সাদা আভা বিলটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে।

কি করবেন

  • নৌকা ভ্রমণ: বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নৌকা ভ্রমণ। বিলে ঘুরে দেখার জন্য প্রায় ৫০টি নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। ১ ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা।
  • পাখি দেখা: চারিদিকে পাখির কলরব শুনতে শুনতে নৌকা ভ্রমণ অন্যরকম এক অনুভূতি দেবে।
  • ছবি তোলা: লাল শাপলার রক্তিম সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী করার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

চেচুয়া বিল কখন যাবেন

সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত চেচুয়া বিলে প্রচুর শাপলা ফোটে। এই সময়টাতেই বিলটির সৌন্দর্য সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়। সকালে উদিত সূর্যের আলোয় লাল শাপলার দৃশ্য এবং বিকেলে সূর্যাস্তের রঙে রাঙানো শাপলা অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা দেবে। তবে মনে রাখবেন, সূর্য প্রখর হলে শাপলা ফুল বুজে যায় এবং রাতের বেলা আবার ফোটে।

চেচুয়া বিল যাওয়ার উপায়

ময়মনসিংহ শহর থেকে বাসে বা অন্যান্য যানবাহনে করে সহজেই ত্রিশাল উপজেলায় পৌঁছানো যায়। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৪ কি.মি. দূরে ৫নং রামপুর ইউনিয়নের ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে চেচুয়া বিল অবস্থিত। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে অটোরিক্সা করে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছাতে হবে রামপুরার ঠাকুরবাড়ি মোড়ে। পরে চেচুয়া বিল পর্যন্ত ভ্যান কিংবা হেঁটে দুইভাবে যাওয়া যায়। ভ্যানে যেতে সময় লাগবে পাঁচ মিনিটের মতো। হাতের বাম পাশে সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন শাপলা বিলের। সাইনবোর্ড ঘেষে যে রোড নেমে গেছে সেই রাস্তা ধরে ২ মিনিট হাটলেই শাপলা বিলের দেখা মিলবে। যারা মোটর বাইকে যেতে চান, ময়মনসিংহ থেকে সর্বমোট ২৫ কিলোমিটার।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
  • বিলের সৌন্দর্য রক্ষা এবং সারাবছর ফুল ধরে রাখতে ফুল তোলা নিষিদ্ধ।
  • বিলে যাওয়ার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থার পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় কিছুটা অসুবিধা পোহাতে হতে পারে।
  • শুক্র, শনি সহ সরকারি ছুটির দিনে দর্শনার্থীর বেশি ভিড় হয়।
  • স্থানীয় মানুষেরা পর্যটকদের সাহায্য করতে উৎসুক।
  • ২০২৩ সালে বিলটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের কাজ চলমান থাকায় প্রত্যাশিত পরিমাণে শাপলা ফোটেনি। তাই যাওয়ার আগে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করে বর্তমান পরিস্থিতি জেনে নেওয়া উচিত।

চেচুয়া বিল বাংলাদেশের অন্যান্য বিখ্যাত শাপলা বিলের মতো বড় না হলেও এর নান্দনিক সৌন্দর্য যে কোন প্রকৃতিপ্রেমীর মন জয় করে নেবে। একটু পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সহকারে এই রক্তিম সৌন্দর্যের মধ্যে ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অনন্য হবে।

Leave a Comment
Share