রাজবাড়ী

রথখোলা সানমঞ্চ

রাজবাড়ী, বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি জেলা। রাজধানী ঢাকা থেকে অদূরে অবস্থিত এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, যা পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো রথখোলা সানমঞ্চ। সময়ের আবর্তে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও, এই স্থাপনাটি এখনও তার অতীত গৌরবের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

রাজবাড়ি শহর থেকে প্রায় দুই স্টেশন পশ্চিমে, প্রাচীন হড়াই নদীর তীরে, বর্তমান পদ্মার কাছাকাছি অবস্থিত বেলগাছি গ্রামে রথখোলা সানমঞ্চ (Rothkhola Sanmoncho) এর অবস্থান। এই স্থানটি স্থানীয়ভাবে রাম জীবনের আখড়া নামেও পরিচিত। এই আখড়ার অংশ হিসেবেই সানমঞ্চ এবং দোলমঞ্চ নির্মিত হয়েছিল। কালের বিবর্তনে এই স্থাপনাগুলি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও, এখনও এর ধ্বংসাবশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।

নির্মাণকাল

রথখোলা সানমঞ্চের সঠিক নির্মাণকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও, স্থাপত্যশৈলী এবং স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে অনুমান করা হয় যে এটি পাল আমলের নির্মিত। পাল রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাদের শাসনামলে অসংখ্য বিহার, মন্দির এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। রথখোলা সানমঞ্চও সম্ভবত সেই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র ছিল।

গঠনশৈলী

সানমঞ্চটি ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। মঞ্চের চারপাশে সুন্দর নাচঘর ছিল, যেখানে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে নৃত্য প্রদর্শিত হতো। রথযাত্রার সময় এই মঞ্চে বিগ্রহ স্থাপন করা হত এবং সেখান থেকে রথ টানা হত। এই কারণেই এই স্থানটি রথখোলা নামে পরিচিত।

দোলমঞ্চটিও ইট দিয়ে নির্মিত এবং এর আকার সানমঞ্চের চেয়ে ছোট। দোলযাত্রার সময় এই মঞ্চে কৃষ্ণ ও রাধার মূর্তি স্থাপন করা হত এবং দোল খেলা হত।

রথখোলা সানমঞ্চ এবং দোলমঞ্চ শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবেই ব্যবহৃত হত না, এটি ছিল সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান, মেলা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হত।

বর্তমানে রথখোলা সানমঞ্চ এবং দোলমঞ্চ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। সময়ের আবর্তে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও এর ধ্বংসাবশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। এই স্থাপনাগুলি সংরক্ষণ এবং পুনর্নির্মাণ করার জন্য সরকার এবং স্থানীয় জনগণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

রথখোলা সানমঞ্চ যাওয়ার উপায়

ঢাকার গাবতলি থেকে রাবেয়া, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, রাজবাড়ী পরিবহণ, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে পাদ্মা সেতু পার হয়ে রাজবাড়ী যেতে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া লাগে। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস ও বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজবাড়ী আসতে পারবেন। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৩৪০ থেকে ৭৮২ টাকা।

রাজবাড়ী সদর পৌছানোর পরে সিএনজি কিংবা অটোরিক্সা নিয়ে রথখোলা সানমঞ্চ যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

রাজবাড়ীতে থাকার জন্য কয়েকটি হোটেল হলো:

  1. প্রাইম হোটেল, মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান পিং-মৃত-নাজির উদ্দিন সাং-বেড়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী পৌরসভা: 01913959222
  2. হোটেল গোল্ডেন, রাজবাড়ী সদর: 01715132674
  3. হোটেল সেভেনটি ওয়ান আবাসিক এন্ড রিসোর্ট, রাজবাড়ী সদর: 01712121928
  4. গুলশান বোডিং, আঃ কাদের প্রামানিক গং পিতা-মৃত-মজিবর প্রামানিক সাং-সজ্জনকান্দা, রাজবাড়ী পৌরসভা: 01923193138

খাওয়া দাওয়া

রাজবাড়ীতে বিভিন্ন ধরণের খাবারের রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য পান বাজারের ভাদু শাহার দোকানের চমচম, রেলগেইটের হৈরা শাহের চপ এবং ঝালাই পট্টির কুলফি মালাই খেতে পারেন।

বেলগাছিতে রথখোলা সানমঞ্চ ছাড়াও আরও কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। বেলগাছির অদূরে হাড়োয়ায় অবস্থিত কষ্টিপাথরের মদনমোহন জিউর মন্দির পাল আমলের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

রথখোলা সানমঞ্চ বাংলাদেশের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটি আমাদের অতীতের সাক্ষী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণ এবং পুনর্নির্মাণ করলে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নত হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও এটি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সহায়তা করবে।

Leave a Comment
Share