মুন্সিগঞ্জ

পদ্মা রিসোর্ট

ঢাকা বিভাগের মুন্সিগঞ্জ জেলার পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে নয়নাভিরাম ও অপরূপ সুন্দর একটি রিসোর্ট যার নাম পদ্মা রিসোর্ট (Padma Resort)। যারা কর্ম চঞ্চল শহরের গন্ডি পেড়িয়ে প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্য পেতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। যান্ত্রিক জীবনের ধরাবাঁধা নিয়ম, কোলাহল, শব্দ ও বায়ু দূষণ এবং সর্বোপরি নগর জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহ শেষে একটুরো নির্মল প্রশান্তির এনে দিতে পারে পদ্মা নদীর মাঝখানের জেগে উঠা চরে গড়ে উঠা এই পদ্মা রিসোর্ট। পরিবার নিয়ে অথবা বন্ধুদের সাথে জম্পেশ আড্ডায় পদ্মা রিসোর্ট হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ জায়গা।  ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্টের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি.। সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। পদ্মা রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার পাশে পদ্মা নদীর বুকে।

সর্বমোট ১৬টি ডুপ্লেক্স কটেজের নিয়ে তৈরি হয়েছে পদ্মা রিসোর্ট। যার ১২টি কটেজের নাম করা হয়েছে বাংলার ১২ মাসের নাম অনুযায়ী আর বাকি ৪টা নামকরন হয়েছে ঋতুর নামে। বলে রাখাএকটু নিরিবিলি থাকতে চান তো সর্বপশ্চিমের কটেজগুলো এবং এগুলো বাংলা মাসের নাম অনুযায়ী শুরু।

প্রতিটি কটেজে আছে একটি বড় বেডরুম, দুটি সিঙ্গেল বেডরুম, একটি ড্রইংরুম। আছে দুটি ব্যালকনি এবং একটি বাথরুম। প্রতিটি কটেজে ৮ জন করে থাকা যাবে। বিশেষ আকর্ষন হিসেবে আছে সুন্দরী পাতা দিয়ে তৈরি করা ঘরের চাল৷ দেয়াল ও অন্যান্য জায়গায় বাঁশ ও তাল গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে নিখুঁতভাবে ৷ ডুপ্লেক্স এই কটেজের নিচ তলায় রয়েছে এক সেট সোফা, টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড, দেড় তলায় অত্যাধুনিক ফিটিংসহ কমোড, বেসিন, লুকিং গ্লাস, শাওয়ার ইত্যাদি দিয়ে তৈরি বাথরুম এবং বসার জন্য সুবিশাল বারান্দা, ছাড়াও ২য় তলায় পাবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো ২টি সিঙ্গেল বেড, সেইসাথে মাঝখানে মধ্যখানে সেন্টার টেবিল ও ওয়ারড্রোব।

শীতে কটেজের চারপাশ রঙ-বেরঙের ফুলে ভরে ওঠে আর বর্ষায় পানির রাজ্য। রিসোর্টের উঠোনে ইজি চেয়ারে রাতের তারা গুনতে পারেন। দিনে পারেন দেশি নৌকায় পদ্মা বেড়াতে। রিসোর্ট রেস্টুরেন্টে টাটকা ইলিশ পাবেন। শাকসবজি, গরু, মুরগি আর হাঁসের মাংসও পাবেন। মৌসুমি ফলফলাদিও মিলবে।

কি আছে পদ্মা রিসোর্টে?

আউটডোরে – বাইরে আছে লেভিশ বিচ চেয়ার যেখানে হেলান দিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন নদীর পারের নয়নাভিরাম সন্দর্য। এছাড়াও আছে ঘোড়া, এই ঘোড়ায় চরেও ঘুরে বেরাতে পারবেন আপনি।

রেস্টুরেন্ট – রিসোর্টের ভিতরে বেশ অনেকখানি জায়গা নিয়ে আছে সুসজ্জিত রেস্টোরেন্ট। এখানে ১২০ জনের মতো বসার জায়গা আছে।

রিভার ক্রুজের ব্যবস্থা – যারা নৌকা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তাঁদের জন্য আছে বিভিন্ন রকম ছোট বড় নৌকার ব্যবস্থা। এখানে আছে রাবার বোট যাতে অনায়াসে ২-৬ জন বসতে পারবে। স্পিড বোটের ব্যবস্থাও আছে এখানে। আর এক ধরনের নৌকা হচ্ছে কান্ট্রি বোট, একটু বড় হয় এই নৌকাটা, এখানে একসাথে ২০-২৫ জন উঠতে পারবে। আর যারা নদীতে মাছ ধরার শখ রাখেন তারা ফিশিং বোটেও চড়তে পারেন। সব বোটেই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা আছে।

খেলাধুলা – এখানে আপনি চাইলে আপনার বন্ধুদের সাথে মেতে উঠতে পারেন বিভিন্ন খেলায়- ফুটবল, বিচ ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ঘুড়ি উড়ানো, ফ্রিজবি, এমনকি দেশীয় খেলা হাডুডুও চাইলে খেলতে পারবেন।

বুকিং করার উপায়

সরকারী ছুটির দিনে যাবার আগে অবশ্যই আগেই কটেজ বুক করে যেতে হবে। আগে থেকে বুক করতে হলে পদ্মা রিসোর্টের ঢাকা অফিসে আপনাকে বুকিং মানি দিয়ে বুক করতে হবে।

যোগাযোগ করতে চাইলে
এস এম নজরুল ইসলাম
জেনারেল ম্যানেজার
মোবাইলঃ ০১৭১২-১৭০৩৩০, ০১৭৫২-৯৮৭৬৮৮
টেলিফোনঃ ৮৭৫২৬১৭

খরচ

সারাদিনের জন্য কটেজ ভাড়া ২৩০০টাকা (২০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট) এবং সারাদিন সমেত রাতের জন্য ৩৪৫০ টাকা (৩০০০টাকা + ১৫%ভ্যাট)।

নদীর শীতল পানিতে গোসল করা কিংবা স্পিডবোট (প্রতি ঘন্টা ২৫০০ টাকা), সাম্পান নৌকা (প্রতি ঘন্টা ১২০০ টাকা) অথবা ট্রলার (প্রতি ঘন্টা ৬০০ টাকা) করে ঘুরতে পারেন পদ্মার নদীর অপার সৌন্দয্য।

পদ্মা রিসোর্ট যাওয়ার উপায়

অনেক ভাবেই যেতে পারেন পদ্মা রিসোর্ট এ। যেতে পারেন বাসে অথবা প্রাইভেট গাড়িতে। লৌহজং থানা মসজিদ ঘাট পর্যন্ত সরাসরি আসতে পারবেন ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল অথবা ইলিশ পরিবহনে করে, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭০ টাকা। মিরপুর ১০, ফার্মগেট , শাহবাগ থেকে যেতে পারেন স্বাধীন পরিবহন এ। অন্যাদিকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে পারেন “গ্রেট বিক্রমপুর পরিবহন” (মাওয়া-গুলিস্থান-মাওয়া) কিংবা “গোধুলী পরিবহনে” (মাওয়া-গাজীপুর/যাত্রাবারি-মাওয়া)। সেক্ষেত্রে মাওয়া ফেরীঘাট যাবার আগেই লৌহজং থানার যাবার পথের চৌরাস্তায় মোড়ে নেমে রিক্সা অথবা অটোরিক্সাতে ১৫ মিনিটের পথ গেলেই হবে।

অনেকটা এরকমঃ মাওয়া ফেরী ঘাট > লৌহজং চৌরাস্তা মোড় > লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ী > পদ্মা রিসোর্ট।

আর নিজের সাথে গাড়ি থাকলে তো কোন কথাই নেই। পথ চিনে যেতে তেমন কোন বেগ পেতে হবে না। সেক্ষেত্রে যাত্রাপথে আপনাকে দুই জায়গায় সর্বমোট ৬০ টাকা টোল দিতে হবে। গাড়ি রাখার জন্য লৌহজং থানা’র সামনে অনেক জায়গা রয়েছে। লৌহজং থানার পাশের মসজিদ ঘাটে রয়েছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং স্পিডবোট। মাওয়া ফেরিঘাট হতে রিসোর্টের নিজস্ব স্পীডবোটে করে সরাসরি রিসোটে।

আগে থেকে ফোনে যোগাযোগ করে গেলে রিসোর্টের নিজেদের ইঞ্জিন চালিত নৌকা আপনাকে ওই পারে নিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে প্রতিজনের ৫০ টাকা করে। অবশ্য এই ভাড়ায় আসা-যাওয়া দুটি পারাপারই রয়েছে।

খাবারের ব্যবস্থা

পদ্মা রিসোর্টের আছে সু-সজ্জিত রেস্টুরেন্ট যা ২০টি টেবিল চেয়ার দিয়ে সাজানো সেখানে অনায়েসে ২০০ জন লোক একসাথে খেতে পারে এবং আপনি চাইলে লাঞ্চ বা ডিনারসহ যেকোন পার্টি আয়োজন করতে পারেন। রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগে আপনাকে রিসোর্ট অফিস থেকে জনপ্রতি ৩৫০টাকা (৩০০টাকা + ১৫% ভ্যাট) দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে। দুপুরের খাবার মেনুতে থাকছে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই (১ পিস), মুরগীর মাংস (বড় ১ পিস), সবজি, সালাত তবে মিনারেল ওয়াটার আলাদা ভাবে কিনতে হবে যার ১লিটারের দাম ৪০টাকা। সেই সাথে পাবেন কোমলপানীয় (ক্যানঃ ৪০ টাকা, পেপসি ১.৫ লিটারঃ ১০০ টাকা, পেপসি ২ লিটারঃ ১৫০ টাকা)।

সকালে নাস্তা করতে চাইলে ১০০ টাকা লাগবে। পদ হিসেবে থাকবে পরটার সাথে সবজি, ডিম আর চা। পানির বোতল আলাদা নিজে কিনতে হবে অবশ্য।

পদ্মা রিসোর্টে খাবার জিনিসের মাত্রারিক্ত বেশি এবং বাহিরে থেকে খাবার আনার অনুমতিও নাই। তবে এন্ট্রির সময় পর্যটকদের চেক করে না, সেই সুবাদে আপনি চাইলে আপনার ব্যাকপ্যাকে করে খাবার নিতে পারেন।

Leave a Comment
Share