মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে অবস্থিত জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর (Jagadish Chandra Bose Museum) বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান যা মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৫০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। এই জাদুঘরটি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটায় স্থাপিত। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানটিতে ছয়টি পুকুর রয়েছে, যা পরিবেশকে আরও মনোরম করে তুলেছে। বিশ্ববরেণ্য এ বিজ্ঞানীর মৃত্যুর পর পৈতৃক বাড়িটি “স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর” হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। এখানে তাঁর ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, হাতে লেখা নোট, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং তাঁর জীবন ও কর্মের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন জগদীশ চন্দ্র বসু। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে। তিনি ছিলেন একাধারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক ও দেশপ্রেমিক। তাঁর আবিষ্কারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বেতার তরঙ্গ, ক্রোস্কোগ্রাফ, এবং উদ্ভিদের প্রাণ থাকার প্রমাণ।
১৮৮৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভৌত বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। গবেষণার প্রতি তাঁর অগাধ নিষ্ঠা ও উৎসর্গের ফলে তিনি বিজ্ঞান জগতে বিশেষ স্থান অর্জন করেন। তিনি প্রথম মাইক্রোওয়েভ যোগাযোগের প্রস্তাব দেন এবং তাঁর গবেষণার ভিত্তিতেই আধুনিক রেডিও প্রযুক্তি উন্নত হয়।
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়িটি ১৯৯৭ সালে সংস্কার করে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। ২০১৪ সালে এটিকে আরও সম্প্রসারিত ও আধুনিকায়ন করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
স্যার জগদীশচন্দ্র বসু কমপ্লেক্সটিতে দুটি প্রধান ভবন রয়েছে। একটিতে জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবন ও কর্মের উপর আলোকপাত করা হয়েছে। অন্যটিতে তাঁর ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত আছে।
ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জ মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আপনি স্থলপথ বা নৌপথ ব্যবহার করে সেখানে যেতে পারেন।
স্থলপথ
গুলিস্তান থেকে বিভিন্ন বাস সার্ভিস যেমন ঢাকা ট্রান্সপোর্ট, নয়ন পরিবহন, ডিটিএল, ঝিলিক পরিবহন, দীঘিরপাড় ট্রান্সপোর্টে মুন্সীগঞ্জ যেতে পারেন। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মুন্সীগঞ্জ পৌঁছানোর পর, স্থানীয় পরিবহন যেমন রিক্সা, অটোরিকশা বা সিএনজি ব্যবহার করে রাঢ়িখাল গ্রামে জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘরে যেতে পারবেন।
নৌপথ
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে মুন্সীগঞ্জে নিয়মিত লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া চাঁদপুরগামী লঞ্চও মুন্সীগঞ্জে থামে। সদরঘাট থেকে ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাট থেকে স্থানীয় পরিবহন ব্যবহার করে জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘরে যেতে পারবেন।
জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর শুধুমাত্র একটি ঐতিহাসিক স্থানই নয়, এটি বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এই জাদুঘর নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় উৎসাহিত করবে এবং স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী তৈরিতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
Leave a Comment