মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত একটি দেউল বা মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোলশো শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়, তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা। এই দেউলটি ফরিদপুর-মাগুরা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত যার বিপরীত দিক দিয়ে বয়ে গেছে চন্দনা নদী। এই দেউলটি বারো কোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু। এর ভিতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভুল হবে না৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনা গুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভাবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল৷ দেউলটি বারো কোণ বিশিষ্ঠ একটি ভবনের মত স্থাপনা৷ দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ আছে, একটি দক্ষিণ মুখী অন্যটি পশ্চিম মুখী৷
এটি তৎকালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণবিশিষ্ঠ কাঠামো। বারোটি কোণ থাকায় উপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মত দেখা যায় ৷ দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট৷ স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ৷ দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণ রয়েছে৷ রামায়ন কৃষ্ণলীলার মত হিন্দু পৌরাণিক কাহীনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা, পবন পুত্র বীর এবং যুদ্ধচিত্রও এইসদাউলের গায়ে খচিত রয়েছে৷ প্রতিটি কোনের মাঝখানে কৃত্তিমূখা স্থাপন করা রয়েছে৷ তবে দেউলটির কোথাও কোন লেখা পাওয়া যায়নি৷ বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে৷ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সুরক্ষিত সম্পদ৷
কিংবদন্তি রয়েছে যে, মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ রাজা প্রতাপাদিত্যকে যুদ্ধে পরাজিত করে এটি নির্মাণ করেছিলেন। মানসিংহের সাথে প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে মানসিংহের জয়লাভ ইতিহাসের বিচারে সত্য নয়। ১৬১২ সালে প্রতাপাদিত্যের সাথে সুবেদার ইসলাম খানের ভাই এনায়েত খানের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজয় বরণ করলে তাকে দিল্লিতে নেয়া হয়, এ অবস্থায় বোঝা যায় রাজা প্রতাপাদিত্য মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। আবার মানসিংহ এতদাঞ্চল ছেড়ে যান ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং তিনি মারা যান ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে। অতএব দেখা যায়, দুজনের কেউ এই মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। তবে ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে গভর্নর সংগ্রাম সিংহ দেউলটি বিজয়স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যই নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মঠটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সংরক্ষিত।
প্রথমে আপনাকে ঢাকা থেকে ফরিদপুরে যেতে হবে। ঢাকা থেকে ফরিদপুরে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – গোল্ডলাইন এবং আজমিরি এন্টারপ্রাইজ (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ফোনঃ ০৬৩১-৬৬৯৮৮, মোবাইলঃ ০১৭৫৫৫২২২০০, ০১৭৩৩২০৮৮৭), জাকের এন্টারপ্রাইজ (ফোনঃ ০১৭১২৪২৪১৩৪), সাউদিয়া পরিবহন (ফোনঃ ০৬৩১-৬৩৬৪৪, মোবাইলঃ ০১৯১৬১৩৬৫৩১, ০১৭১৭৬০৫৫৭৬)।
ঢাকার গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইন এবং সাউথ লাইন পরিবহনের বাস পাওয়া যায়। এসি ৬০০ টাকা এবং নন-এসি ৩০০ টাকা ভাড়া। এদুটো বাস চেয়ার কোচ। এছাড়া বাকিগুলো নরমাল। সাউথ লাইন এর কাউন্টারের মোবাইল নাম্বার – 01713285400 (গাবতলী কাউন্টার)
ফরিদপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে মধুখালীতে পৌছাতে পারবেন। এছাড়া মাগুরা এবং ঝিনাইদহ জেলায় যাতায়াতকারী বাসেও চড়তে পারেন। প্রায় ৪০ মিনিটে ২০/- টাকা ভাড়ায় আপনি মধুখালী বাজারে পৌছাতে পারবেন। সেখান থেকে রিকশায় করে আপনি দেউলে পৌছাতে পারবেন।
ফরিদপুরে যাওয়ার পর ভ্রমণকারীর থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল। ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আবাসিক হোটেল গুলোর দূরত্ব মাএ ১ কিলোমিটার, রিক্স ভাড়া ১০ টাকা। আবাসিক হোটেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ৮০ টাক সর্বোচ্চ ভাড়া ৯০০ টাকা। আবাসিক হোটেল গুলোতে সিঙ্গেল ও ডাবল উভয় বেড রয়েছে। সরকারি কর্মকতা ও কর্মচারীদের জন্য রয়েছে সার্কিট হাউজ।
হোটেলের নাম | মোবাইল নম্বর | ভাড়া |
হোটেল র্যাফেল ইনস | +০৬-৩১-৬১১০৬ | এসি-৯০০/- ননএসি-৩৪০/- |
হোটেল লাক্সারী | +০৬-৩১-৬২৬২৩ | এসি-৯০০/- ননএসি-৩৪০/- |
হোটেল পদ্মা | +০৬-৩১-৬২৬২৩ | এসি-৪০০/- ননএসি-১৬০/- |
হোটেল পার্ক প্যালেস | ০১৫৫৬৩২৭০৬৭ | এসি-৩৫০/- ননএসি-১৫০/- |
হোটেল শ্যামলী | +০৬-৩১-৬৪৫৩৮ | এসি-৩৫০/- ননএসি-১৫০/- |
হোটেল জোনাকী | +০৬-৩১-৬৪১৬৮ | ননএসি-৬০/- |
রাজ বোডিং | ০১৭২৫০৬৮৭৮৮ | ননএসি-৮০/- |
আঞ্চলিক ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউট | +০৬-৩২৩-৫৬৩২৯ | ১০০/- ননএসি |
Leave a Comment