চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে, পাহাড়-টিলার কোলে, শঙ্খ নদী ও শ্রীমতী খালের কলকল ধ্বনির মাঝে লুকিয়ে আছে এক স্বর্গরাজ্য – কাঞ্চননগর। এই নামটি শুধু একটা গ্রামের নাম নয়, এটি একটা সুমিষ্ট পেয়ারার ব্র্যান্ড, একটা ঐতিহ্য, একটা অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় পেয়ারাকে বলা হয় ‘গোঁয়াছি’। আর কাঞ্চননগরের গোঁয়াছি মানেই অনন্য স্বাদের এক অভিজ্ঞতা।
কাঞ্চননগর এবং এর পার্শ্ববর্তী হাশিমপুর গ্রাম মিলে প্রায় দুই হাজার পেয়ারা বাগানের আবাসস্থল। পাহাড়ের ঢালে ঢালে, ছোট-বড় টিলায় টিলায় সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য পেয়ারা। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বাগান মালিক ও শ্রমিকরা ঝাঁকে ঝাঁকে পেয়ারা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হলদে সাদা এবং হলদে সবুজ রঙের পাকা পেয়ারা বাগানের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেওয়া, থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা পেয়ারা দেখলে চোখ ফেরানো যায় না।
এই পেয়ারা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, এর স্বাদ ও গন্ধও অনন্য। বড় বড় ডাঁসা পেয়ারার রসালো ভেতরটা খেলে মুখে মিষ্টি একটা স্বাদ ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশে কাঞ্চননগরের পেয়ারার এই অনন্য স্বাদের জন্য এর চাহিদা সবসময়ই বেশি।
কাঞ্চননগরের পেয়ারা চাষ শুধু একটা কৃষিকাজ নয়, এটা একটা ঐতিহ্য, একটা জীবনধারা। বংশ পরম্পরায় অর্ধলক্ষ মানুষ এই পেয়ারা চাষ ও বিক্রির সাথে জড়িত। প্রতি মৌসুমে এই অঞ্চলে কোটি কোটি টাকার পেয়ারা উৎপাদিত হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাঞ্চননগরের পেয়ারা শুধু স্থানীয় বাজারেই সীমাবদ্ধ নয়। রওশন হাট, বাদামতল, সৈয়দাবাদ রেল স্টেশন, বাগিচাহাট ও দোহাজারী রেলস্টেশন সহ বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে এই পেয়ারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। লাল কাপড়ে মোড়ানো পেয়ারার ভাঁড় দেখা যায় সর্বত্র।
কাঞ্চননগরের পেয়ারা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ কিভাবে স্থানীয় কৃষি উৎপাদন একটি অঞ্চলের অর্থনীতিতে এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই সুমিষ্ট পেয়ারার স্বর্গরাজ্য চট্টগ্রামের গর্ব, বাংলাদেশের ঐতিহ্যের এক অংশ।
মৌসুমে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা দোহাজারী, বাগিচাহাট, খানহাট, কাঞ্চননগর, চক্রশালা, হামিশমুর, বাদামতল, রৌশনহাট ও পটিয়া কমলমুন্সীরহাট, দারোগা হাট, হাইদগাঁও সাতগাউছিয়া মাজার গেইট, পানবাজার, ভট্টাচার্য হাট, এলাকায় রীতিমতো বসে পাইকারি পেয়ারার হাট।
কাঞ্চননগর, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
কাঞ্চননগরের পেয়ারার স্বাদ নিতে এবং বাগানগুলো ঘুরে দেখতে চাইলে চট্টগ্রাম থেকে সহজেই যাওয়া যায়। চন্দনাইশ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাঞ্চননগর। চন্দনাইশ থেকে সিএনজি অথবা অন্যান্য স্থানীয় যানবাহনযোগে সহজেই কাঞ্চননগরে পৌঁছানো যায়।
Leave a Comment