সিলেট

চাঁন মিয়া আনারস বাগান

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট, ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে এক স্বর্গরাজ্য। পাহাড়, ঝর্ণা, সবুজ বনানী আর চা বাগানের পাশাপাশি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চাঁন মিয়া আনারস বাগান (Chand Mia Pineapple Garden)। সবুজের গালিচায় মোড়া এই বাগানটি এখন সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মতিন চাঁন মিয়ার ৮ ছেলের মধ্যে ৭ জন প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে হানিকুইন জাতের আনারস চাষ করছেন। বাগানটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য এর নামকরণ করা হয়েছে “চাঁন মিয়া পাইনাপেল গার্ডেন”।

সবুজের সমারোহে চাঁন মিয়া আনারস বাগান

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার দত্তরাইল গ্রামে অবস্থিত চাঁন মিয়া আনারস বাগান যেন সবুজের এক বিশাল ক্যানভাস। দিগন্তজোড়া সবুজ টিলা, সারি সারি আনারস গাছ আর নীল আকাশের মিতালী – সব মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। উঁচু-নিচু টিলার উপরে সরু পথ, ছোট-বড় টিলাবেষ্টিত আনারস বাগান, এক টিলা থেকে অন্য টিলায় যাওয়ার আঁকাবাঁকা মেঠোপথ – এই সবকিছু মিলে আপনার মনে এক অন্যরকম অনুভূতি জাগাবে।

এখানে প্রবেশ করতে এখন ৩০ টাকার টিকিট লাগে।

কেন যাবেন চাঁন মিয়া আনারস বাগানে?

  • শহরের কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির নীরব সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
  • সবুজ টিলা, আনারস গাছ আর মেঘে ঢাকা আকাশ – প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য আপনার মন জয় করবে।
  • ছবি তোলার জন্য চমৎকার একটি লোকেশন।
  • সিলেট শহর থেকে কাছে হওয়ায় সহজেই ঘুরে আসা যায়।

২০২২ সাল থেকে বাগানটিকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এখানে দর্শনার্থীদের জন্য যা যা রয়েছে:

  • দৃষ্টিনন্দন বসার স্থান
  • ছাউনি
  • টিলার উপরে ক্যান্টিন
  • ছবি তোলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান

চাঁন মিয়া আনারসের বিশেষত্ব

সিলেটে জলঢুপি ও শ্রীমঙ্গলের আনারস বিখ্যাত হলেও, চাঁন মিয়া আনারস বাগানের আনারসের স্বাদ ও কদর দিন দিন বাড়ছে। এই বাগানের আনারসগুলো বেশ বড় এবং সুস্বাদু হয়। এখানে আনারসের তৈরি বিভিন্ন খাবার, যেমন – আনারসের আচার ও জুস পাওয়া যায়, যা আপনার জিভে জল এনে দেবে।

যেভাবে একটি আনারস বাগান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হলো

বাগানের মূল উদ্যোক্তা রাসেল আহমদ জানান, ২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি রইছ উদ্দিন নামের এক ব্যাংক ম্যানেজারের পরামর্শে এই বাগান করার সিদ্ধান্ত নেন। রইছ উদ্দিন শ্রীমঙ্গলে তার নিজের কয়েকটি আনারস বাগান দেখান এবং বাগান করতে উৎসাহিত করেন। এরপর রাসেল তার ভাইদের সাথে আলোচনা করে ৬০ বিঘা জমিতে আনারস বাগান শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাগানটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে বাগানটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।

চাঁন মিয়া আনারস বাগান যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব সড়ক, রেল এবং আকাশপথে পাড়ি দেওয়া যায়। বাসে যেতে চাইলে ঢাকার সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে সরাসরি সিলেটের বাস পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে প্রায় ৫৭০ থেকে ৮০০ টাকা। এছাড়া, ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ভ্রমণ করে যেতে পারেন। আকাশপথে যেতে চাইলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট পাওয়া যায়।

সিলেট শহর থেকে গোলাপগঞ্জ যাওয়ার জন্য কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস অথবা সিএনজি অটোরিকশা পাওয়া যায়। বাসে অথবা সিএনজিতে গোলাপগঞ্জ যেতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগবে এবং জনপ্রতি ভাড়া প্রায় ৩০ টাকা।

গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী থেকে চাঁন মিয়া আনারস বাগান যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করে নিতে পারেন। চৌমুহনী থেকে বাগানে যেতে প্রায় ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে এবং সিএনজি রিজার্ভ করার ভাড়া সাধারণত ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কিছু টিপস:

  1. আরামদায়ক পোশাক ও জুতো পরুন, যা হাঁটাচলার জন্য উপযোগী।
  2. সাথে পর্যাপ্ত জল ও হালকা খাবার নিন।
  3. আনারস বাগান পরিদর্শনের সময় ছবি তুলতে ভুলবেন না।
  4. পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  5. স্থানীয়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন।

সবুজ প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে, অথবা একটি সুন্দর দিন কাটাতে চান, তাহলে চাঁন মিয়া আনারস বাগান হতে পারে আপনার জন্য সেরা গন্তব্য।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ GolapganjPineapple GardenSylhet