হিলি স্থলবন্দর (Hili Landport) বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার। দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় অবস্থিত এই স্থলবন্দরটি ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সীমান্তে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটের সাথে সংযুক্ত এই বন্দরটি পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, এটি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্যও একটি আকর্ষণীয় স্থান।
হিলি স্থলবন্দরের ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এ বন্দরটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৯৯৭ সালে সরকার এটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে এবং এরপর থেকে এর কার্যক্রম ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে একটি। হিলি বন্দরের মাধ্যমে চাল, গম, পেঁয়াজ, ফলমূল, পাথর, কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়।
বর্তমানে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কাস্টমস অফিস, ওয়্যারহাউস, ট্রাক টার্মিনাল, ওজন স্কেল এবং অন্যান্য সহায়ক সুবিধা।
হিলি স্থলবন্দর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এ বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, যা স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশে ভূমিকা রাখছে।
হিলি জিরো পয়েন্ট বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী সীমান্তের এক অনন্য পর্যটন আকর্ষণ। সীমান্তের দুই পাশে দুই দেশের ভিন্ন সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার এক অপূর্ব মেলবন্ধন পর্যটকদের বিমোহিত করে। শুধু সীমান্ত দেখা নয়, এর আশেপাশেও রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশ অংশে কান্তজির মন্দির, হিলির রাজবাড়ি এবং ভারতীয় অংশে হিলির মা কালী মন্দির উল্লেখযোগ্য। সীমান্তের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দুই দেশের পরিবেশ অবলোকন, বর্ডার মার্কেট থেকে কেনাকাটা, এমনকি অনুমতি সাপেক্ষে অল্প সময়ের জন্য সীমান্ত পার হওয়ার অভিজ্ঞতা এ স্থানটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে।
হিলি জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সীমান্তের দুই পাশের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, খাবার এবং পোশাকের বৈচিত্র্য অন্য রকম এক অনুভূতি পাওয়া যায়। হিলি জিরো পয়েন্ট ভ্রমণ কেবল বিনোদনই প্রদান করে না, এটি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হিলি স্থলবন্ধর দিয়ে ভারতে ভ্রমণ বেশ সহজ এবং সাশ্রয়ী। বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রয়োজন, তবে সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ অনুমতিপত্রের মাধ্যমে সীমিত এলাকায় ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। ভিসা প্রাপ্তির পর হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভারতে প্রবেশ করা যায়। বর্তমানে হিলি স্থলবন্ধর দিয়ে ভারতের বালুরঘাট, কোলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রেন অথবা বেসরকারি যানবাহনে যাওয়া যায়। তবে ভ্রমণের পূর্বে দুই দেশের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন ও ভিসা সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য জেনে নেওয়া জরুরি।
ভ্রমণের সময় পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সঙ্গে রাখা অপরিহার্য। অযথা অতিরিক্ত মালপত্র বয়ে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং কাস্টমস বিধি সম্পর্কে সচেতন থাকুন। স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করার জন্য পূর্বেই টাকা Exchange করে নেওয়া ভালো। ভ্রমণের সময় নিজের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখুন এবং অপরিচিত ব্যক্তির প্ররোচনায় পড়বেন না। হিলি স্থলবন্ধর দিয়ে ভারতে ভ্রমণ করতে চাইলে ভ্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও সহায়তা পেতে ভ্রমণ এজেন্সি অথবা অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য হিলি বর্ডার বাজারে (Hili Border Bazar) পাওয়া যায়, যা অনেকের জন্য কেনাকাটার আকর্ষণ হতে পারে। এই বাজার হিলি স্থলবন্দরের ঠিক সীমান্ত লাগোয়া যা বাংলা হিলি বাজার নামেই বেশী পরিচিত। এই বর্ডার বাজার শুধু বাণিজ্যের জন্যই নয়, পর্যটকদের কাছেও একটি আকর্ষণীয় স্থান। হিলি বর্ডার বাজারে বিভিন্ন ধরণের পণ্য সামগ্রী পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – শাড়ি, পোশাক, কসমেটিকস, জুতা, ব্যাগ, ইলেকট্রনিক পণ্য, মশলা, চা, কফি, মিষ্টি, ফল ইত্যাদি।
রাজধানী ঢাকা হিলি স্থলবন্দর এর দূরত্ব প্রায় ২৮৫ কিলোমিটার। সড়কপথ ও রেলপথের মাধ্যমে এটি দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত। ঢাকা থেকে সরাসরি বাস এবং ট্রেনে যাওয়া যায়। এছাড়াও অন্যান্য বড় শহর থেকে এখানে সহজেই সড়কপথে আসা যায়। এছাড়া, হিলি রেলস্টেশন থাকার ফলে রেলপথেও পণ্য পরিবহন করা যায়, যা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
বাসে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সরাসরি দিনাজপুর বা হিলি পর্যন্ত বাস সার্ভিস রয়েছে। কয়েকটি জনপ্রিয় বাস কোম্পানি নিম্নলিখিত রুটে চলাচল করে:
ঢাকা থেকে বাসে দিনাজপুর পৌঁছাতে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে, এরপর স্থানীয় যানবাহন বা বাসে হিলি স্থলবন্দরে পৌঁছানো যায়।
ট্রেনে যাওয়ার উপায়
ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকা থেকে দিনাজপুর রুটে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া নীলসাগর এক্সপ্রেসে করে জয়পুরহাট নামতে পারেন। ভাড়া শোভন চেয়ারে ৩৯০ টাকা। জয়পুরহাট থেকে বাস বা অটোতে চেপে এক ঘন্টা জার্ণি করে হিলি বর্ডারে পৌঁছাতে পারবেন।
ট্রেনে দিনাজপুর পৌঁছানোর পর স্থানীয় বাস বা অটোরিকশা ব্যবহার করে হিলি স্থলবন্দরে পৌঁছানো যায়, যা প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় নেয়।
হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকার বন্দরের আধুনিকীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল কাস্টমস ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাস্তা সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। তবে বন্দরের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। যেমন, অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, সীমান্তে দীর্ঘ অপেক্ষা সময়, অবৈধ বাণিজ্যের ঝুঁকি এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা।
হিলি স্থলবন্দর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর, যা দেশের আমদানি-রপ্তানি খাতকে গতিশীল করে তুলছে। সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে এটি আরও কার্যকর ও লাভজনক করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এ বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ হলে এটি দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে।
হিলিতে রেল স্টেশন থাকলেও আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি না থাকায় ঢাকা থেকে সরাসরি হিলি রেল স্টেশন যাওয়া সম্ভব নয়।
সকাল ৯টা থেকে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
না আপনি বেশী পরিমান প্রোডাক্ট একবারে কিনে নিয়ে আসতে পারবেন না। মূলকথা হলো, আপনি ব্যবসার জন্যে আনতে পারবেন না, শূধুমাত্র নিজের প্রয়োজনের জিনিস কিনে আনতে পারবেন।
Leave a Comment