দিনাজপুর জেলার ইতিহাসের একটি বিশেষ অংশ দখল করে আছে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি (Ghughudanga Zamindar Bari)। ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত এই জমিদার বাড়িটি দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে, আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পূর্ণভবা নদীর তীরে অবস্থিত।
ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি শুধুই একটি স্থাপনা নয়, এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং সমাজকল্যাণের এক অনন্য নিদর্শন। যারা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য এবং ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী, তাদের জন্য এই বাড়ি ভ্রমণ একটি অবশ্যকর্তব্য। প্রকৃতি এবং ইতিহাসের মেলবন্ধন দেখতে হলে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ি হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
ঘুঘুডাঙ্গার প্রাচীন নাম ছিল “একবারপুর”। প্রায় একশো বছর আগে, ব্রিটিশ শাসনের সময় ভারতের জলপাইগুড়ির অধিবাসী নবীর মোহাম্মদ ব্যবসায়িক কারণে একবারপুরে আসেন এবং এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। পরে তার পুত্র ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী ধীরে ধীরে জমিদারি ক্রয় করে এই এলাকায় জমিদার বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন।
জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পূর্ব পর্যন্ত (১৯৫০ সাল) এই জমিদারি প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নেয় জমিদার বাড়িতে। বিষয়টি টের পেয়ে পাক বাহিনীর সৈন্যরা ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িতে হামলা চালায়। পাক বাহিনীর বোমা হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির অনেক স্থাপনা। তারা জমিদার বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। মূল্যবান জিনিসপত্রের মাঝে ছিল- ১০১ ভরি ওজনের একটি সোনার কই মাছ, রুপার বাটযুক্ত ছাতা-হাত পাখা, রুপার বিশাল লাঠি, তামার বড় হাড়িসহ বিভিন্ন মালামাল। তবে সোনার তৈরি একটি চেয়ার এখনও জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে।
পাক বাহিনীর হামলায় বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংসের পর ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে জমিদার বাড়ির বিশাল প্রবেশদ্বার।
ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার পরিবার তাদের সমাজকল্যাণমূলক কাজের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তাদের উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো:
দিনাজপুর শহর এবং এর আশপাশের এলাকায় পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু মানসম্পন্ন হোটেল এবং থাকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক হোটেলই শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত, যা পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক। এখানে দিনাজপুরে থাকার জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেলের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
দিনাজপুর রেস্ট হাউস শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যা পর্যটকদের জন্য অন্যতম পছন্দের একটি জায়গা। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কক্ষ, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত সুবিধা এবং আধুনিক সংযোগসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এখানে পারিবারিক ভ্রমণকারীদের জন্য বড় কক্ষ এবং গ্রুপ পর্যটকদের জন্য সাশ্রয়ী প্যাকেজ পাওয়া যায়। রেস্ট হাউসটির কাছেই রয়েছে শহরের প্রধান বাজার এবং স্থানীয় খাবারের দোকান, যা পর্যটকদের জন্য অতিরিক্ত আকর্ষণ।
দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে অবস্থিত হোটেল পার্ক ভিউ একটি আধুনিক হোটেল যেখানে উচ্চমানের পরিষেবা দেওয়া হয়। হোটেলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর ব্যালকনি থেকে দিনাজপুরের সবুজ পরিবেশ উপভোগের সুযোগ। এখানে কক্ষগুলোতে আরামদায়ক বিছানা, রুম সার্ভিস, এবং টেলিভিশন সুবিধা রয়েছে। হোটেলের নিজস্ব রেস্তোরাঁতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক খাবারের ব্যবস্থা আছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা যোগ করে।
দিনাজপুরে থাকার জন্য আরেকটি জনপ্রিয় অপশন হলো রংপুর ইন। এটি শহরের কেন্দ্রীয় এলাকার কাছে অবস্থিত এবং এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীদের জন্যও এই হোটেলটি একটি ভালো বিকল্প। হোটেলের অভ্যন্তরে রয়েছে বড় কনফারেন্স হল এবং ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা। ভ্রমণকারীরা যদি শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তবে এটি একটি আদর্শ জায়গা।
সাশ্রয়ী মূল্যে থাকার জন্য হোটেল চেয়ারম্যান একটি ভালো বিকল্প। এটি শহরের মধ্যে অবস্থিত এবং সহজে অ্যাক্সেসযোগ্য। এখানে সাধারণ মানের কক্ষ থাকলেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ থাকার নিশ্চয়তা দেয়। হোটেলের স্টাফরা অত্যন্ত বন্ধুসুলভ এবং পর্যটকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সর্বদা প্রস্তুত। এছাড়া এখান থেকে রিকশা বা অটোতে সহজেই দিনাজপুরের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করা যায়।
ফুলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই হোটেলটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আদর্শ। এটি শহরের প্রধান ব্যস্ততা থেকে একটু দূরে, যা পর্যটকদের জন্য একটি নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করে। হোটেলের কক্ষগুলোতে বড় জানালা এবং আরামদায়ক আসবাবপত্র রয়েছে। এটি মূলত প্রকৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো দেখতে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত।
দিনাজপুরের বেশিরভাগ হোটেলই পর্যটকদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। কিছু হোটেলে ফ্রি ব্রেকফাস্ট এবং ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, আবার কিছু হোটেলে সাশ্রয়ী মূল্যে পরিবেশবান্ধব থাকার সুযোগ মেলে। প্রয়োজন অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করে দিনাজপুর ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক করে তোলা সম্ভব।
Leave a Comment