নেতারহাট (Netarhat), শাল, মহুয়া, পলাশে ঘেরা ঝাড়খন্ডের (Jharkhand) একটি পাহাড়ি উপত্যকা যেটি লাতেহার জেলায় অবস্থিত। বর্ষায় এখানকার প্রকৃতি আরো সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। নেতারহাটের উচ্চতা ১০৭১ মিটার আর কালিম্পংয়ের ১২৪৭। পাহাড়ের পর পাহাড় পেরিয়ে নেতারহাটে পৌঁছে গেলে আর বোঝা যায় না যে প্রায় কালিম্পংয়ের উচ্চতায় ছোটনাগপুরের এই হিল স্টেশনটা। এটা আসলে একটা বড়ো সড়ো ভ্যালির মত। পাহাড়ী জায়গায় যেরকম চড়াই উৎরাই থাকে, সেরকম কম। নেতারহাটের একটা স্পেশাল ব্যাপার হল সানরাইজ সানসেট দুটোই দেখা যায়। আর কোন পাহাড়ী জনপদে এরকম হয় কিনা জানা নেই।
নেতারহাট পৌছে ঐদিন মধ্যাহ্নভোজ সেরে ঘুরে আসুন নেতারহাট থেকে ১০কিমি দুরে অবস্থিত ম্যাগনোলিয়া পয়েন্ট। সানসেটও দেখে নিন তার সাথে। সেখান থেকে ছোটনাগপুর মালভূমির অনেকটা অংশ বেশ ভাল ভাবে দেখা যায়। তার ২কিমি দূরে রয়েছে কোয়েল ভিউ পয়েন্ট, অপূর্ব সুন্দর নিস্তব্ধ এক জায়গা। এর নীচ দিয়ে বয়ে গেছে কোয়েল নদী যা বয়ে গেছে পালামু টাইগার রিজার্ভের ভেতর দিয়ে। কোয়েল ভিউ পয়েন্ট সংলগ্ন রয়েছে পাইন বন। এছাড়া এর আশে পাশে রয়েছে আপার ঘাঘরি এবং লোয়ার ঘাঘরি জলপ্রপাত। এছাড়াও আছে নেতারহাট ড্যাম, ট্যাহার, বানারি, লোধ জলপ্রপাত প্রভৃতি জায়গা।
পাহাড়-জঙ্গলের মাঝে লুকিয়ে থাকা লোধ জলপ্রপাত এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। এটি ঝাড়খণ্ডের উচ্চতম জলপ্রপাত। ছোট নাগপুর মালভূমির এক পাহাড়িয়া নদী বুঢ়া প্রায় ৪৬০ ফিট উপর থেকে নীচে লাফিয়ে এই সুন্দর জলপ্রপাতটির সৃষ্টি করেছে। নেতারহাট থেকে প্রায় ৬০ কিমি দূরে লোধ। আকাবাকা পাহাড়ি পথে একসময় লোধ এর কাছে পৌছাবেন, তবে প্রায় ১ কিমি আগে গাড়ি রাস্তা শেষ হবে তাই বাকী পথটা হেঁটেই যেতে হবে। সিড়ি রয়েছে। একটা অদ্ভূত গা ছমছমে আরণ্যক পরিবেশ মনকে নাড়া দেয়।
লোধ জলপ্রপাত ভালভাবে দেখার সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর এর মাঝামাঝি, এর পর কিন্তু জলের পরিমাণ কমে আসবে। আগ্রহীরা আগস্ট এও যেতে পারেন তবে পথ খানিকটা বিপজ্জনক হয়ে যায়।
কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে হাতিয়া এক্সপ্রেস ধরে পরের দিন পৌছে যান রাঁচি। সেখান থেকে সকালের নাস্তা সেরে রওনা দিন নেতারহাটের উদ্দেশ্যে। রাঁচি থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৬০কিলোমিটার। রাস্তার দুধারে অপূর্ব মনোরম দৃশ্য প্রত্যেকের নজর কাড়বে।
নেতারহাট এখনও আনএক্সপ্লোরড। এখনও গুটিকয়েক মাত্র থাকার জায়গা। ঝকঝকে কোনও হোটেল তৈরী হয়নি। সেরা জায়গাটা হল ফরেস্ট বাংলো। ভেতরটা স্বর্গের মত। লম্বা কলোনিয়াল বাংলো। দু একটা কটেজ, সানরাইজ ফেসিং।
এছাড়া থাকার জন্য ঝাড়খণ্ড ট্যুরিজমের প্রভাত বিহার হোটেল আছে। ভাড়া ১৩০০ টাকা। ট্যাক্স নিয়ে ১৪৫৬ টাকা। অনলাইন বুকিং হয়। এছাড়া আরও কিছু হোটেল আছে। ভাড়া আর একটু কম। প্রভাত বিহারের পাশে ঝাড়খণ্ড সরকারের আর একটি হোটেল আছে। সেটি লিজ নিয়ে চালায় একটি প্রাইভেট সংস্থা। ভাড়া শুরু ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
নেতারহাট হোটেল –> কোয়েল ভিউ পয়েন্ট –> নেতারহাট ড্যাম –> নাশপাতি বাগান –> Upper ঘাগরী ফলস –> নেতারহাট আবাসিক স্কুল –> রাঁচি স্টেডিয়াম –> রাঁচি জগন্নাথ মন্দির –> রাঁচি স্টেশন।
Leave a Comment