শরীয়তপুর

রুদ্রকর মঠ

রুদ্রকর মঠ (Rudrakar Moth) শরীয়তপুর জেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের রুদ্রকর গ্রামে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক একটি হিন্দু মন্দির। বর্তমানে এটি রুদ্রকর জমিদার বাড়ি মঠ হিসেবে পরিচিত হলেও আদতে এটি একটি মন্দির। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে এবং মনোহরদী বাজারের কাছে শরীয়তপুর-ভেদরগঞ্জ মহাসড়কের অতি নিকটে অবস্থিত। রুদ্রকর মঠের উত্তরে পার্শ্বে জমিদার বাড়ি এবং দক্ষিণপ্রান্তে চরআটং। পূর্ব প্রান্তে বুড়িরহাট বাজার অবস্থিত। একেবারে পশ্চিমে আংগারিয়া বাজার এবং উত্তর পশ্চিমে শরীয়তপুর পুলিশ লাইন মাঠ। মঠের একেবারে সামনের দিকে রয়েছে একটি বড় পুকুর। ধারণা করা হয় মঠ নির্মাণের সময় পুকুরটি খনন করা হয়েছে। পূজোর সময় অনেক হিন্দু আশেকানে ভক্ত উক্ত পুকুরে গোসল করতে আসেন।

মন্দিরের একটি প্রস্তরলিপি থেকে জানা যায়, রুদ্রকর এলাকার বাবু গুরুচরণ চক্রবর্তী নামের একজন হিন্দু ধাপে ধাপে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, মন্দিরটি নবাব আলীবর্দী খানের আমলের কোনো একসময়ে (১৩০৫-১৩১৫ বঙ্গাব্দ) নির্মাণ করা হয়েছে।

মা রাশমণি দেবীর সমাধিকে অমর করে রাখার জন্য তৎকালীন জমিদার বাবু গুরুচরণ চক্রবর্তী মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এরমধ্যে ১৮৯৮ সালে মঠটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে একটি বড় শশ্মান মন্দির রয়েছে। মন্দিরটির মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে থাকা বারান্দার চার কোণায় চারটি ছোট মন্দির (মঠ)। এরমধ্যে বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার। চার কোণায় চারটি ছোট মন্দির যথাক্রমে প্রায় ১.৯৫ মিটার। এছাড়া তৃতীয় তলায় মূল টাওয়ারের গায়ে চারপাশে চারটি দেবী মূর্তির অলঙ্করণ রয়েছে। মঠটির বাহিরে ও ভেতরে অসাধারণ এবং সমসাময়িক কারুকাজ শোভিত।

রুদ্রকর মঠ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে নৌ এবং সড়ক উভয় পথেই শরীয়তপুরে যাওয়া যায়। তবে স্বপরিবারে গেলে নৌপথে গেলে বেশ আরামদায়ক একটা ভ্রমণ হবে। ঢাকার সদর ঘাট থেকে শরীয়তপুর, ওয়াপদাঘাট, নড়িয়া, ভোজেশ্বর, সুরেস্বর, ভেদরগঞ্জ, লাউখোলা, ডামুড্যা, গোসাইরহাটে লঞ্চ যায়। শরীয়তপুর কিংবা ওয়াপদা ঘাটে নামলে সেখান থেকে মটর সাইকেল, বেবি ট্যাক্সি, ইজিবাইক, টমটম, ভ্যান প্রভুতি দিয়ে রুদ্রকর মঠে যেতে পারবেন।

যারা সড়ক পথে যেতে চান তারা মাদারীপুরের মোস্তাকপুর হয়ে বাস যোগে শরীয়তপুরে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে মনোহর বাজার বাস স্টান্ড নামতে হবে। আর ঢাকা হতে যেতে চাইলে সায়দাবাস থেকে প্রতি দিন সকাল ৯টায়, ১২ টায় ৫ টায় গ্লোরী পরিবহনের বাস শরীয়তপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তাছাড়া ফেম পরিবহনের বেনাপোল টু শরীয়তপুর ভায়া, খুলনা, যশোর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ প্রভূতি বাস চলাচল করে।

শরীয়তপুর পৌছে জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ডামুড্যা-শরীয়তপুর মহাসড়কের পাশে রুদ্রকর ইউনয়িন পরিষদ কার্যালয়ে চলে যেতে হবে। এর উত্তর দিকে রাস্তায় পা বাড়ালেই রুদ্রকর জমিদার বাড়ি যা স্থানীয়দের কাছে বাবুবাড়ি নামেও পরিচিত। এর পাশেই বিশাল পুকুর লাগোয়া সুউচ্চ রুদ্রকর মঠ।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ mothshariatpur