শেরপুর

রাজার পাহাড়

রাজার পাহাড় (Raja Pahar) শেরপুর জেলার শ্রীবরদী পৌর শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে কর্নঝোরা বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ে যতগুলো পাহাড় রয়েছে তার মধ্যে রাজার পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এ পাহাড়ের বৈশিষ্ট্য সিলেট বা বান্দরবানের পাহাড়ের মতো না হলেও, সবুজের ঐশ্বর্যে সে কারও চেয়ে কোন অংশে কম নয়। শহুরে পর্যটকদের কাছে এখনো এই পাহাড় খুব পরিচিত না হলেও, স্থানীয়েদের কাছে এটি জনপ্রিয় বিনোদন স্পট। বছরে প্রায় সব সময়ই শতশত মানুষ রাজার পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে বেড়াতে আসেন।

জনশ্রুতি রয়েছে, প্রাচীনকালে এখানে এক স্বাধীন রাজ্য ছিল। যার রাজা ছিলেন অত্যন্ত প্রতাপশালী। পরে তার নামানুসারেই এ পাহাড়ের নাম হয় রাজার পাহাড়। এছাড়া রাজা পাহাড়ের বিভিন্ন কোনায় দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু ও কলার বাগানের। স্থানীয়রা বলেন, অনেক আগে পাগলা দারোগা নামে জনৈক ব্যক্তি রাজার পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন। তার ছেলে মেয়েরা এখনো ওই অঞ্চলে রয়েছে। তারাই এ পাহাড়ের কোনায় গড়ে তোলেন বিভিন্ন ফলের বাগান। পরে স্থানীয় আদিবাসীরাও এসব ফলের বাগান করা শুরু করে।

আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাজার পাহাড়ের আকার দেখলেই বোঝা যায়, গারো পাহাড়শ্রেণির মধ্যে সে আসলেই এক রাজা। এর চূড়ায় রয়েছে শতাধিক হেক্টরের সবুজে ছাওয়া সমতল ভূমি। এর চূড়ার বিশাল সমতল ভূমিতে যেতে সরু পথ আর অদ্ভুত নির্জনতা যে কাউকে মুগ্ধ করবেই। এমনি এ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় আশপাশের কর্ণঝোড়া, মালাকোচা, দিঘলাকোনা, হারিয়াকোনা, চান্দাপাড়া, বাবেলাকোনাসহ ভারতের সীমান্ত এলাকা।
পাহাড়ের নিচ দিয়েই কুলকুল শব্দে বয়ে চলেছে ঢেউফা নদী। বর্ষাকালে ঢেউফা নদী জোয়ারে কানায় কানায় ভরে উঠে। কিন্তু শীতে হয় শীর্ণকায়া। তবে খরস্রোতা এই পাহাড়ি নদীর পানি কখনই কমে না। এর বুকের বিশাল বালুচর দেখলে মনে হবে যেন পাহাড়ের কূলঘেষা এক বিকল্প সমুদ্র সৈকত।

পাহাড়ের পাশেই রয়েছে আদিবাসী জনপদ বাবেলাকোনা। অসংখ্য উচু টিলায় ঘেরা অন্যবদ্য এই গ্রাম প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবেলাকোনায় গারো, হাজং ও কোচ অধ্যুষিত আদিবাসীদের সংস্কৃতির ভিন্নমাত্রায় রয়েছে বিচিত্র জীবনধারা। এ জনপদ যেন বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের চলমান জীবন সংগ্রামের এক বিরল দৃষ্টান্ত। আদিবাসীদের সংস্কৃতি, সংরক্ষণ ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে বাবেলাকেনা কালচারাল একাডেমি, জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ ও মিলনায়তন। এখান থেকে আদিবাসীদের সম্পর্কে জানা যাবে অনেক কিছুই।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে শেরপুরের সড়ক যোগাযোগ খুবই ভাল। ঢাকা মহাখালী থেকে সোনার বাংলা, সাদিকা, শেরপুর টেনিস ক্লাব পরিবহণের বাসে শেরপুর আসতে পারেন, ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা। শেরপুর শহর থেকে বাস, সিএনজি আসতে হবে শ্রীবরদী, ভাড়া ২৫-৪৫ টাকা। শ্রীবরদী থেকে সিএনজিতে কর্ণঝোড়া/বালিঝুড়ি বাজার, ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। কর্নঝোড়া ও বালিঝুড়ি এই দুই বাজারের মাঝামাঝি ৩/৪ কিলো দূরত্বে রাজার পাহাড়ে, রিজার্ভ অটো নেবে ২০০-৫০০ টাকা।

কর্নঝোড়া বাজার ও বালিঝুড়ি বাজার থেকে প্রতিদিন ২ টি বাস সকাল ও সন্ধ্যায় ঢাকায় চলাচল করে। শ্রীবরদী উপজেলা থেকেও প্রায় সারাদিন ঢাকাগামী সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে। সীমান্তবর্তী সড়ক থেকে রাজার পাহাড় পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা ও বন্ধুর হওয়ায় বর্ষাকালে একটু সমস্যা হয়।

কোথায় থাকবেন

রাজার পাহাড় থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক হল বন বিভাগের ডাক বাংলো, তাছাড়াও যে কেউ থাকতে পারেন লাউয়াচাপড়ার পিকনিক স্পটের কাছে উন্নতমানের ‘বনফুল’ রিসোর্টে। তবে এক্ষেত্রে খরচ হবে ৩০০০-৫০০০ টাকা। শ্রীবরদী উপজেলার ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন কম খরচে। যদিও এর জন্য আগে স্থানীয় ইউএনওর অনুমতি লাগবে জেলা সদরে রয়েছে জেলা পরিষদ এবং এলজিইডির রেস্ট হাউজ এবং জেলা ডাক বাংলো। এছাড়া জেলা শহরে হোটেল সম্পদ, হোটেল কায়সার ইন ছাড়াও আরো কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করা যাবে।

  • হোটেল সম্পদ প্লাজা (আবাসিক) – ফোনঃ ০১৭১৮২৯০৪৪, ০৯৩১-৬১৭৭৬
  • আরাফাত গেস্ট হাউজ (আবাসিক) – ফোনঃ ০৯৩১-৬১২১৭
  • বর্ণালী গেস্ট হাউজ (আবাসিক) – ফোনঃ ০৯৩১-৬১৫৭৫
  • কাকলী গেস্ট হাউজ (আবাসিক) – ফোনঃ ০৯৩১-৬১২০৬

শেরপুর গেলে অবশ্যই অবশ্যই দুধের ছানা, ছানার পায়েস খেয়ে আসবেন, কারন এটা এই অঞ্চলের খ্যাত একটা খাবার।

এছাড়া আরও দেখতে পারবেন

রাজার পাহাড় এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ঘুরতে পারেন –

  • বাবেলাকেনা কালচারাল একাডেমী।
  • ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন অফিস,জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ এবং মিলনায়তন।
  • কালী মন্দির ও গির্জা।
  • বিট অফিস।
  • বিজিবি ক্যাম্প
  • রাবার বাগান।
  • বালিঝুড়ি।

সতর্কতা

সীমান্ত এলাকা হওয়ায় রাজার পাহাড়ে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হবে। অযাচিতভাবে কারো সঙ্গে ঝামেলায় জড়াবেন না। সঙ্গে এমন কিছু বহন করবেন না যা আইন বিরুদ্ধ। বাবলাকোনায় গেলে স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।

Leave a Comment
Share