জামালপুর

গান্ধী আশ্রম

গান্ধী আশ্রম (Gandhi Ashram) জামালপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৩৪ সালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নের কাপাস হাটিয়া গ্রামে আশ্রমটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ততকালীন জামালপুর মহাকুমার কংগ্রেসের সম্পাদক কৃষক নেতা নাসির উদ্দিন সরকার নামের এক ব্যক্তি। গান্ধিজীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এ আশ্রমটি এক একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়। আশ্রমে সেবামূলক বেশকিছু কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। এখানে প্রতিদিন বহুদর্শনাথী আশ্রমটি দেখার জন্য আসেন।

ব্রিটিশ শাসিত ভারত বর্ষে পরাধীনতার শৃংখল মোচনের লক্ষ্যে পরিচালিত লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় স্বদেশের হিতব্রতে মানব কল্যাণের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছিলো জামালপুর গান্ধী আশ্রম। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পথ রেখা ধরেই ১৯৩৪ সালে গান্ধী আশ্রমের প্রতিষ্ঠা। নাছির উদ্দিন সরকারের জ্যৈষ্ঠ কন্যা রাজিয়া খাতুন ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। আশ্রমের কার্যক্রমের মধ্যে ছিল খাদি কাপড় বোনা থেকে শুরু করে শিক্ষা কার্যক্রম, পাঠাগার, স্বাবলম্বন, হস্ত-কারুশিল্প তৈরী, শরীর চর্চা, বৃক্ষ রোপণ, স্বাস্থ্য সেবা সহ স্বদেশের হিতব্রতে বিবিধ কর্মসূচী। স্বদেশ চেতনা ও দেশ প্রেমে তরুন সমাজকে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল আশ্রমের অন্যতম লক্ষ্য। পারিকস্তানী শাসক চক্র ১৯৪৮ সালে বার বার হামলা ও আক্রমন চালিয়ে আশ্রমের বহ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয়, টিকে থাকে শুধু অফিস গৃহটি।

প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া আশ্রমটি আবার পুনর্জাগরিত করেছেন নাসির উদ্দিন সরকারের নাতি হিল্লোল সরকার এবং উৎপল কান্তি ধরসহ এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বর্তমানে আশ্রম পরিচালনার দায়িত্বে আছেন হিল্লোল সরকার। একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সব কার্যক্রম।

টিকে থাকা অফিসঘরটি সাজানো হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি ও তথ্য দিয়েছ। এখানে ভারতবর্ষের ব্রিটিশপূর্ব, ব্রিটিশ-পরবর্তী তৎকালীন পাকিস্তান, ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের নানা আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা রয়েছে। এর পাশেই গড়ে উঠেছে মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর। জাদুঘরটি দোতলা। নিচতলায় আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি–সংবলিত তথ্য। এর পাশেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য ফাঁসির কাষ্টে জীবন উৎসর্গকারীদের নামসহ নানা তথ্য–সংবলিত বোর্ড। জাদুঘরের সিঁড়ির কাছেই খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরের একটি মানচিত্র, জামালপুর-টাঙ্গাইল অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত নানা ইতিহাস। বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের নানা তথ্য, বাংলার নবাব মির কাশিম, নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস রয়েছে। সন্ন্যাসী, ফকির বিদ্রোহসহ টিপু পাগলের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পাগলপন্থীদের বিদ্রোহের নানা ইতিহাসও রয়েছে।

গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘরে স্বদেশি আন্দোলনের সময়কার আশ্রমে ব্যবহৃত চরকা, চেয়ার-টেবিল, পুরোনো সিন্দুক, তখনকার ছাত্রীদের তৈরি নানা সূচিকর্ম ছাড়াও আশ্রমের পাঠাগারে রয়েছে দুর্লভ বইয়ের এক বিশাল সংগ্রহ। রয়েছে মুক্তিসংগ্রামের নানা স্মৃতিচিহ্ন, ছবি, বিভিন্ন বধ্যভূমির মাটি। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক কালপর্বভিত্তিক ইতিহাস গ্যালারিও রয়েছে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নানা ইতিহাসে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর। একই সঙ্গে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর একটি গ্যালারিও।

এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠির উদ্যোগে ২০০৭ সালে ০২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে জাতিসংঘ আহুত আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে পুনরায় শুরু হয় মানব কল্যাণের জামালপুর গান্ধী আশ্রমের শুভধ্যায়ীনানা কার্যক্রম।

গান্ধী আশ্রম যাওয়ার উপায়

জামালপুর এবং মেলান্দহ হতে সড়ক পথে খুব সহজেই সরাসরি গান্ধী আশ্রম যাওয়া যায়। উভয় স্থান থেকেই দূরত্ব মাত্র ১৫ কি.মি.। জামালপুর সদর উপজেলার গেট পার থেকে অটোরিক্সা নিয়ে যেতে হবে হাজীপুর বাজার অথবা সরাসরি জাদুঘরে। জামালপুর সদর উপজেলা থেকে কাপাসহাটিয়া যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা। রাস্তা সরু হওয়ায় মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও বড় বাস নিয়ে যাওয়া যাবে না।

কোথায় থাকবেন

গান্ধী আশ্রম এলাকায় থাকার কোনো সুব্যবস্থা না থাকলেও জামালপুর শহরে বেশ ভালো মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। জামালপুর শহরে ভালোমানের আবাসিক হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল রায়ান ইন্টারন্যাশনাল (+8801735-544650), হোটেল শেখ রিপন ইন্টারন্যাশনাল (01717-629225), হোটেল প্রতিক্ষা (01912-877811), হোটেল আল সামাদ (01725-067720), হোটেল সৌদিয়া ইন্টারন্যাশনাল (01766-755755) উল্লেখযোগ্য।

খাওয়া-দাওয়া

গান্ধী আশ্রম এলাকায় ছোট ছোট রেস্তোরা পাবেন, সেখানে খুব কমমূল্যে খাবার খেতে পারবেন। এছাড়াও জামালপুর শহরে হোটেল, সম্রাট, তাজ হোটেল নামক কয়েকটি রেস্তোরা সহ অনেক ফাস্টফুডের দোকান আছে, যেখানে আপনি জামালপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাবেন।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ ashramjamalpurMelandaha