‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বিখ্যাত পঙক্তি যেন বাস্তবে প্রাণ পেয়েছে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কে। এ সড়কটি বর্তমানে “তালতলি” (Ghughudanga Talsari Road) নামে পরিচিত, কারণ এর দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদেরই নয়, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মনও মোহিত করে।
১৯৮৬ সালে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগে রাস্তার দুই পাশে প্রায় ৫,০০০ তালবীজ রোপণ করা হয়। সেই বীজ থেকেই আজকের এই অসংখ্য তালগাছের সৃষ্টি। একসময় এটি ছিল কাঁচা মেঠোপথ, তবে ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই সড়কটি পাকা করা হয়, যা এলাকাটির সৌন্দর্য এবং ব্যবহারের উপযোগিতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই সড়কের পাশের গ্রামগুলোর মানুষজন সাধারণ জীবনযাপনের সঙ্গে তালগাছের পরিচর্যা করে। তালগাছ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন পণ্য স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তালগাছ শুধু সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তালগাছ বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর এবং এ থেকে প্রাকৃতিক উপকরণ যেমন তাল শাঁস, রস, ও কাঠ পাওয়া যায়।
নওগাঁ বা রাজশাহী থেকে নিয়ামতপুর উপজেলা সদরে পৌঁছে স্থানীয় অটোরিকশা বা মোটরসাইকেল ভাড়া করে সরাসরি ঘুঘুডাঙা তালতলি সড়কে যাওয়া যায়।
ঘুঘুডাঙা তালতলী সড়ক শুধুই একটি রাস্তা নয়, এটি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক গভীর সম্পর্কের প্রতীক। তালগাছের ছায়ায় ভরা এই সড়ক একদিকে যেমন ইতিহাসের সাক্ষী, তেমনি এটি পর্যটন ও পরিবেশ সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যদি আপনি প্রকৃতির সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চান এবং বাংলাদেশের গ্রামীণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তবে এই সড়কটি আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য।
Leave a Comment