পটুয়াখালী

ফাতরার চর

কুয়াকাটা সমুদ্রের বিস্তীর্ন বালিয়াড়ি ছেড়ে পশ্চিমদিকে গেলে চোখে পড়বে ঘোলাজলের ছোট্ট স্রোতস্বিনী একটি নদী ও বিক্ষুব্দ সাগর মোহনার বুকে জেগে উঠা ফাতারার বন বা ফাতরার চর নামক সংরক্ষিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এর আয়তন কমবেশি ৯৯৭৫০৭ একর। ইতিমধ্যে এটি ‘দ্বিতীয় সুন্দরবন‘ হিসেবে পরিচিতি ও খ্যাতি পেয়েছে। এখানে রয়েছে কেওড়া, গেওয়া, সুন্দরী, ফাতরা, গরান, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং বানর, শূকরসহ অসংখ্য জীবজন্তু ও পাখি।

সুন্দরবনের একটি অংশ হচ্ছে এই চর। দিনে দুবার এটি জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়। অজগর, গোখরা, গুই সাপের মতো সরীসৃপেরও দেখা পেতে পারেন ভাগ্য সহায় হলে। এ ছাড়া ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাকে আপনি বিমোহিত হবেন। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের বুকে চলার কিছুক্ষণ পরই আপনার চোখে পড়বে সাগরের বুকে জেগে ওঠা ফাতরার চরের বনভূমি। এ যেন সাগরের বুকে ভাসমান কোনো অরণ্য। ট্রলারে চেপে যখনই আপনি ফাতরার চরের খালে ঢুকবেন, তখনই আপনাকে স্বাগত জানাবে দুপাশের ঘন সবুজ অরণ্য। ট্রলারের জেটি পেরিয়ে আপনি চরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও বন বিভাগ নির্মিত একটি রেস্টহাউস। মূলত চরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষের মিঠাপানির জন্য করা হয়েছে এই পুকুর। বন বিভাগের কয়েকজন বনরক্ষী ছাড়া এখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। পুকুরপাড় দিয়ে আপনি এবার প্রবেশ করবেন ঘন গহিন অরণ্যে। প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠা পাখির ডাক আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। চরের পূর্ব অংশে রয়েছে একটি ছোট সমুদ্রসৈকত, ভাটার সময়ে আপনি নামতে পারেন এই সৈকতটিতে। এখানে যেতে হলে বনের সবুজ অরণ্য আর কয়েকটি ছোট খালের ওপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যেতে হবে। ঘন সবুজ পেরিয়ে সাগরের বিশালতা মুগ্ধ করবে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে। তবে দৃষ্টিনন্দন এই চরটিতে এখনো পর্যটকদের জন্য থাকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তবে বন বিভাগের কোনো কর্তাব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে আপনি থাকতে পারেন ওই রেস্টহাউসে।

কখন যাবেন

কেবল নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়েই আপনি ঢুকতে পারবেন ফাতরার চরে। আপনি মাত্র দুই ঘণ্টা সুযোগ পাবেন চরটি ঘুরতে।

কিভাবে যাবেন

কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রলার বনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ইচ্ছে করলে রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়। সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত।

কোথায় খাবেন

ফাতরার চরে খাওয়ার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। একটি মাত্র দোকান আছে যেখানে মোটা চালের ভাত সাথে মুরগী পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি যাওয়ার পথে সাথে শুকনা খাবার নিয়ে যেতে পারেন।

Leave a Comment
Share