লক্ষ্মীপুর

কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ

বাংলা ভাষার জন্য আত্মদানকারী ভাষা শহীদদের স্মরণে আমরা প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে অসংখ্য বীরের নাম লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা। লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের এই ভাষা সৈনিকের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয়েছে কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধ (Comrade Toaha Smriti Soudho) শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি এক বীরের অম্লান কীর্তির স্মারক, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

কমরেড তোয়াহা: একজন ভাষা সৈনিকের জীবন

কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী, সমাজসেবক এবং ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় সৈনিক। তিনি তৎকালীন রামগতি ও কমলনগরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অত্র অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। তার নেতৃত্বে এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনে অবদান

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কমরেড তোয়াহা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয় নেতা, যিনি নিজের জীবনের বাজি রেখে ভাষার দাবিতে লড়াই করেছেন। তার নেতৃত্বে কমলনগর এলাকায় ভাষা আন্দোলন গতিশীল হয়ে ওঠে। তিনি জনগণকে সংগঠিত করেন এবং তাদের মধ্যে ভাষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।

স্মৃতিসৌধ নির্মাণ

কমরেড তোয়াহার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগরের হাজিরহাটের কাছে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই স্মৃতিসৌধ তার নামে “কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ” নামকরণ করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধটি অত্র অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

তোয়াহা স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়

কমরেড তোয়াহার স্মৃতি রক্ষার্থে এবং মেয়েদের শিক্ষার উন্নয়নে তার নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। “তোয়াহা স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়” নামের এই বিদ্যালয়টি অত্র অঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর যাওয়ার জন্য সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন বাস পাওয়া যায়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ইকোনো সার্ভিস, ঢাকা এক্সপ্রেস, জোনাকি, রয়েল কোচ ইত্যাদি বাস আছে। যদি কেউ এসি বাসে যেতে চান, তাহলে রোয়েল কোচ ভাল হবে। ভাড়া ৬০০ – ৯০০ টাকা পড়বে। যেতে সময় লাগবে ৫-৫.৩০ ঘন্টা। লক্ষ্মীপুর থেকে হাজিরহাট বাজারের উত্তর পাশে তোয়াহা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

লক্ষ্মীপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু মানসম্মত হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী উপযুক্ত বাসস্থান নির্বাচন করতে পারেন। উল্লেখযোগ্য হোটেলের মধ্যে রয়েছে এন আর গেস্ট হাউজ, স্টার গেস্ট হাউজ, সেন্টমার্টিন আবাসিক, হোটেল ইউনিক, হোটেল নূর, সোনার বাংলা গেস্ট হাউজ, হোটেল আব-ই-হায়াত ইত্যাদি। এই হোটেলগুলোতে আপনি পাবেন আরামদায়ক বাসস্থান, সুস্বাদু খাবার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। অনলাইনে অথবা ফোনে আগাম বুকিং দিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাড় পাওয়া যায়।

খাওয়া দাওয়া

লক্ষ্মীপুর শহরে খাওয়ার জন্য বৈচিত্র্যময় রেস্তোরাঁ এবং খাবার ঘর রয়েছে। শহরের মেইন রোডের কাছেই পাবেন বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুড শপ এবং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। বাঙালি খাবারের জন্য বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য হল তৃপ্তি হোটেল, হোটেল রাজ মহল, নিউ লক্ষ্মী, গ্র্যান্ড হোটেল, কুটুম বাড়ি, আব্বাস আলী রেস্টুরেন্ট, মোহাম্মদীয়া হোটেল এবং ফুড গার্ডেন। এছাড়াও স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন রকমের স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়। সুতরাং, আপনার রুচি এবং বাজেট অনুযায়ী খাবার বাছাই করতে কোন সমস্যা হবে না।

কমরেড তোয়াহা স্মৃতিসৌধ একজন ভাষা সৈনিকের অম্লান কীর্তির প্রতীক। এই স্মৃতিসৌধ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভাষার জন্য আমাদের পূর্বসূরিরা কত বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদের উচিত তাদের স্মৃতি চির স্মরণীয় করে রাখা এবং তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও ভাষার সেবা করা।

Leave a Comment
Share