যশোর

ভরত রাজার দেউল

ভরত রাজার দেউল (Bharat Rajar Deul) দক্ষিণের জনপদ যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলা থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ বছর আগে গুপ্ত যুগে এ বিশাল আকৃতির সপ্তকটি নির্মাণ করেছিলেন ভরত রাজা যা বর্তমানে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতীক। কালের সাক্ষী হিসেবে সগৌরবে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভরত ভায়নার দেউল যা স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ভরতের দেউল (Bharater Deul) নামে বেশী পরিচিত।

ভরত দেউলের একপাশে রয়েছে সবুজে ঘেরা বিস্তৃত গ্রাম আর অন্যপাশে ভদ্রা নদী। ১৮০০ বছর আগে ভরত নামের তৎকালীন এক প্রভাবশালী রাজা ভদ্রা এই নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ সুন্দরবনের অনেকাংশে রাজত্ব আদায় করেছিলেন। কালের আবর্তে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তিনি ভদ্রা নদীর তীরে ভরত ভায়না নির্মাণ করেন যা পরবর্তিতে ভরতের দেউল বা ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিতি পায়।

ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, প্রত্নস্থানে খ্রিস্টীয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১২ দশমিক ২২ মিটার উঁচু এবং ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি ঢিবির অস্তিত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাশীনাথ দীক্ষিত এ দেউল পরিদর্শনে এসে মন্তব্য করেন যে এটি ৫০ ফুটের অধিক উঁচু এবং ব্যাস ৯০০ ফুটেরও অধিক।

বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাত অর্থ বছরের বরাদ্দ পেয়ে এ দেউলে খননের কাজ চালায়। খননের ফলে দেউলটির পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে। কিন্তু খননের ফলে জানা যায় ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ দেউলের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খননে সমগ্র প্রাসাদটির ভিত থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৯৪টি কক্ষ পাওয়া যায়। চারপাশে চারটি উইং ওয়াল। এর মধ্যে ১২টি কক্ষ। বাকি ৮২টি কক্ষের সমন্বয়ে এ বৌদ্ধ স্তূপটি তৈরি। স্তূপটির চূড়ায় চারটি কক্ষ। এ কক্ষের দুই পাশে আরো আটটি ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ কক্ষগুলো মাটি দ্বারা পরিপূর্ণ। ধারণা করা হয় বৌদ্ধ সপ্তকের উপরিভাগে জাঁকজমকপূর্ণ একটি উপাসনালয় ছিল। প্রাসাদটির চারপাশে তিন মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। উপাসনালয়ের চারপাশে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রদক্ষিণ করে পূণ্য অর্জন করত। চারটি উইং দেয়ালে যে ঘরগুলো ছিল সম্ভবত সেগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতেন বা অবসর সময় কাটাতেন।

প্রতিটি কক্ষের দেয়াল তিন মিটার থেকে ১৩ মিটার পর্যন্ত চওড়া। অনেক ইট ৩৬ সেন্টিমিটার থেকে ৫০ সেন্টিমিটার। ইটগুলো দেখলে মনে হবে হাত দিয়ে তৈরি। অবাক করার বিষয় নির্মাণে যে ইট ব্যবহার হয়েছে এত বড় আকারের ইট এতদঞ্চলের অন্য কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করা হয়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খননকার্য চলাকলীন যেসব পুরাকীর্তি ও জিনিসপত্র পাওয়া গেছে- তার মধ্যে পোড়া মাটির বাঘের মুখমণ্ডল, মানুষের মুখমণ্ডল, দেব-দেবীর হাতের ভগ্নাংশ। বিভিন্ন প্রকৃতির নকশা করা ইট, পোড়া মাটির খেলনা।প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসগুলো সংরক্ষিত আছে খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে।

ভরত রাজার দেউল যাওয়ার উপায়

ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনি যেখানে থাকেন না কেন, আপনাকে প্রথমে খুলনা যেতে হবে। কারণ ভরত রাজার দেউলটি যশোর জেলাতে হলেও খুলনা হয়ে যাওয়াটা সহজ। তাই ঢাকা থেকে প্রথমে বাস অথবা ট্রেনে করে খুলনা যেতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে ভরত ভায়না কিংবা ভরতের দেউল নামক স্থানে যেতে হবে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খর্ণিয়া বা চুকনগর হয়েও খুব সহজে ভরত ভায়নায় (Bharat Bhayna) যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে খুলনা বাসে গেলে ভাড়া পড়বে নন এসি ৪০০ টাকা এবং এসি ৭০০ টাকা।

খুলনা থেকে ভরত রাজার দেউল যাওয়ার রুট

প্রথমে অটোতে খুলনার দৌলতপুর হয়ে মহসিন মোড়ে আসতে হবে, ভাড়া ১০ টাকা। তারপর আবার অটোতে (মাহেন্দ্র) করে শাহপুর বাজার আসতে হবে, এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২০ টাকা। শাহপুর বাজারে নেমে এবার ভ্যান অথবা অটোতে যেতে হবে ভরতের দেউল। তবে ভ্যানচালকদের ভরতের দেউল না বললে চিনবে না। ছয়-সাত কিলোমিটার দূরত্ব যেতে ভ্যান ভাড়া নিবে ২০ টাকা। তবে ফেরার পথে ভ্যান/অটো সহজে পাওয়া যায় না। ভালো হয় আপনি যে ভ্যানে যাবেন ওই ভ্যান ড্রাইভারকে বললে উনি আবার নিয়ে আসবেন আপনাকে।

খুলনা কোথায় থাকবেন

ভরত রাজার দেউল এর আশপাশে থাকার কোনো হোটেল নেই। থাকবার জন্যে আপনাকে খুলনা ফিরে হোটেলে থাকতে হবে। সেই সাথে সন্ধ্যায় খানজাহান আলী সেতু থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

খুলনায় থাকার হোটেলের মধ্যে সিটি ইন,ক্যাসল সালাম, রয়েল ইন্টারন্যাশনাল অন্যতম। এছাড়াও অনেক মধ্যম মানের হোটেল রয়েছে রাত্রিযাপনের জন্যে।

কোথায় খাবেন

ফেরার পথে চুকনগরের বিখ্যাত আব্বাসের হোটেল থেকে খাসির মাংশ খেয়ে আসতে পারেন। চৈ ঝালের রান্নার স্বাদ আপনাকে তৃপ্তি দিবে এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ bharatDeuljessore