গাইবান্ধা

বালাসী ঘাট

বালাসী ঘাট (Balashi Ghat) গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় অবস্থিত যমুনা নদীর তীরে একটি নৌবন্দর ও অন্যতম দর্শনীয় স্থান। গাইবান্ধা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই ঘাটটি ভ্রমণপিপাসুদের কাছে একটি জনপ্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, এবং ভ্রমণের সুযোগ এই স্থানের আকর্ষণ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বালাসী ঘাটের প্রাকৃতিক পরিবেশ নিঃসন্দেহে মনোমুগ্ধকর। বর্ষার সময় যমুনা নদী পানিতে পূর্ণ থাকে, আর শীতকালে নদীর বুকে বালুর চর ভেসে ওঠে। নদীর উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস, এবং নৈসর্গিক দৃশ্য আগত দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এখানে ঘোড়ায় চড়া, নৌকা ভ্রমণ, কিংবা রেলওয়ের ফেরি থেকে নদীর বুকে সূর্যাস্ত উপভোগ করার সুযোগ পর্যটকদের আরও বেশি আকর্ষণ করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

বালাসীঘাট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত। ১৯৩৮ সালে, উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার রেল যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে গাইবান্ধার তিস্তামুখ ঘাটে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালে যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ফেরি সার্ভিসটি তিস্তামুখ ঘাট থেকে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়।

বিশ্বের অন্যতম ব্যতিক্রমী একটি রেল ফেরি সেবার মাধ্যমে পুরো ট্রেন যমুনা নদী পার করা হতো। রেলওয়ে ফেরির ১৩টি লাইনে প্রতি লাইনে ৩টি করে ছোট বগি বা ওয়াগন বহন করার সুবিধা ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে বালাসী ঘাট ব্রিটিশদের মালামাল পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে বালাসী ঘাট নৌবন্দর দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং বিদেশে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। বালাসী ঘাটে রেলওয়ের একটি লোড-আনলোড স্টেশনও রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যমুনা নদীর ভাঙন এবং পলি জমার কারণে বালাসী ঘাটের নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার কারণে ফেরি সেবার কার্যক্রম সীমিত হলেও স্থানটি তার ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এখনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্রমণপিয়াসুদের আকর্ষণ

বালাসী ঘাট প্রতিদিনই স্থানীয় ও বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। যমুনা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নদীর ঢেউ দেখার অভিজ্ঞতা সত্যিই অবর্ণনীয়। এছাড়া এই ঘাট থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করা একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলার মানুষ এখানে এসে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

বালাসী ঘাট যাওয়ার উপায়

রাজধানী ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় যাতায়াতের জন্য এসি ও নন-এসি বেশকিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। এর মধ্যে শ্যামলী পরিবহন, আল হামরা পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস প্রাঃ লিঃ, এবং অরিন ট্রাভেলস উল্লেখযোগ্য। বাসের ধরণ এবং সেবার মান অনুযায়ী জনপ্রতি ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস এবং লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেনে করেও গাইবান্ধায় পৌঁছানো যায়। ট্রেনের আসনের ধরণ অনুযায়ী ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ১৮৮৬ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

গাইবান্ধা শহরে পৌঁছানোর পর রিকশা, অটো রিকশা বা সিএনজিতে চড়ে পুরাতন বাজার হয়ে বালাসী ঘাট যাওয়া সম্ভব। বালাসী ঘাটে পৌঁছানোর জন্য গাইবান্ধার কেতকী বা উড়িয়ার ঘাট থেকেও অল্প দূরত্ব পায়ে হেঁটে রেলওয়ে ফেরি দেখা যায়।

কোথায় থাকবেন

গাইবান্ধায় রাত্রিযাপনের জন্য বেশকিছু ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ, গণ উন্নয়ন কেন্দ্র, এবং এসকেএস ইন হোটেল উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে কলেজ রোডে অবস্থিত এসকেএস ইন হোটেল মানের দিক থেকে সেরা এবং এখানে রুম ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে নির্ধারিত। এই হোটেলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং আরামদায়ক পরিবেশ পাওয়া যায়। পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে গাইবান্ধায় থাকা এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ এবং সাশ্রয়ী করা হয়েছে।

বালাসী ঘাট গাইবান্ধা জেলার ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন। ইতিহাস, প্রকৃতি, এবং আধুনিক কার্যক্রমের সমন্বয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। ভ্রমণপিপাসু এবং ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য বালাসীঘাট এক অসাধারণ গন্তব্য। বাংলাদেশে এমন দৃষ্টিনন্দন এবং ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।

আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং আধুনিক কার্যক্রমের সংমিশ্রণ খুঁজছেন, তবে বালাসীঘাট হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণের আদর্শ গন্তব্য।

Leave a Comment
Share
ট্যাগঃ Balashi Ghatgaibandha