কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার গুনাইঘর (Gunaighar) এলাকায় অবস্থিত বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদ (Baitul Azgar Sat Gomboj Jame Masjid) দেশের অন্যতম স্থাপত্যকীর্তি হিসেবে পরিচিত। মোগল স্থাপত্যের ঐতিহ্য ও আধুনিক নির্মাণশৈলীর মিশেলে গড়া এই মসজিদটি তার ব্যতিক্রমধর্মী গঠন ও দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক হয়ে স্থানীয় ও দেশব্যাপী মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রার্থনার স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একইসঙ্গে এটি একটি নান্দনিক স্থাপত্য নিদর্শন, যা প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে।
২০০২ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০০৫ সালের ১৪ জানুয়ারি এর উদ্বোধন হয়। তিন বছরে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ জন শ্রমিকের কঠোর পরিশ্রমে এই স্থাপত্য নিদর্শন গড়ে ওঠে। মসজিদটির মোতোয়াল্লি ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী।
মসজিদটিতে সাতটি গম্বুজ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গম্বুজ ঝাড়বাতির মাধ্যমে সজ্জিত, যা মসজিদের অভ্যন্তরীণ শোভা বৃদ্ধি করেছে। মসজিদের চার কোণে ৮০ ফুট উচ্চতার চারটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে, যা মোগল-তুর্কি স্থাপত্যের নিদর্শন।
মসজিদটির নির্মাণে মোগল, তুর্কি ও পারস্যের স্থাপত্যধারার প্রভাব স্পষ্ট। এর প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে টেরাকোটার কারুকার্য। মসজিদের বাহ্যিক আবরণে বহুবিধ চাঁদ-তারা ও আরবি ক্যালিওগ্রাফির নকশা করা হয়েছে, যা দৃষ্টিনন্দন ও মোহনীয়।
মসজিদের অভ্যন্তরে আরবি ও বাংলা ভাষায় অসংখ্য ক্যালিওগ্রাফি খচিত রয়েছে। আরবি ভাষায় সুরা আর-রাহমান, আয়াতুল কুরসি এবং চার কুল সুরার অংশবিশেষ নিখুঁত দক্ষতায় ক্যালিওগ্রাফি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলায় খচিত কিছু ক্যালিওগ্রাফি মসজিদটির ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
মসজিদের নির্মাণে ইট, সিমেন্ট, বালি, চিনামাটি ও টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কারুকাজে ৩৫০ মন চিনামাটি ও ২০০ গ্লাস ব্যবহৃত হয়েছে। মসজিদের বাইরের অংশে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা রয়েছে, যা রাতে তারকা-মণ্ডলের মতো ঝলমল করে।
মসজিদের আকার ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩৬ ফুট প্রস্থ। এখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
মসজিদের পশ্চিম পাশে ফুল ও ফলের বাগান এবং একটি বিশাল জলাধার রয়েছে। জলাধারের পাড় শ্বেত পাথর দিয়ে মোড়ানো, যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
ঢাকা থেকে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গুনাইঘর গ্রামে অবস্থিত বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদে ভ্রমণের জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. সড়কপথে বাসে যাত্রা:
২. ব্যক্তিগত বা ভাড়াকৃত গাড়িতে যাত্রা:
ঢাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে কুমিল্লার দিকে যাত্রা করুন। কুমিল্লা শহর পার হয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে দেবিদ্বার উপজেলার দিকে যান। দেবিদ্বার পৌর এলাকা থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে গুনাইঘর গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত।
৩. ট্রেনে যাত্রা:
বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের মোগল স্থাপত্যধারার এক অনন্য নিদর্শন। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের কাছে এটি এক বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। নির্মাণশৈলীর পরিশুদ্ধতা, কারুকার্যের নিপুণতা এবং পরিবেশগত সৌন্দর্য এই মসজিদকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শনে পরিণত করেছে।
Leave a Comment