জগন্নাথপুরের আট কবর (Atkobor) মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত একটি ঐতিহাসিক স্থান যা চুয়াডাঙ্গার জগন্নাথপুরে ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষিত। চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে এ আট কবর (সমাধিস্থল) অবস্থিত। ১৯৯৮ সালে শূন্য দশমিক ৬৬ একর জমির ওপর এই আট কবর কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়। সমাধি ছাড়াও এখানে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ ও একটি সুরম্য মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা আছে। এই ভবনের দেয়ালজুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসের ২০০টি আলোকচিত্র। এছাড়া কেউ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে এই কমপ্লেক্সে আবাসিক সুবিধাও পেতে পারবেন। এছাড়াও এখানে একটি গ্রন্থাগারও আছে।
১৯৭১ সালের ০৩ আগস্ট, গেরিলা কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদা’র সীমান্তবর্তী জয়পুর শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান নেন। এসময়ে পাকিস্তান মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁ পরিকল্পিত প্রতারনার ফাঁদ পাতে। সে জয়পুর ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনীকে খবর দেয় যে, রাজাকারেরা নাটুদা, জগন্নাথপুর এবং এর আশেপাশের গ্রামের জমি থকে পাঁকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। রাজাকার ও পাক আর্মিদের শায়েস্তা করতে ০৫ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বাগোয়ান এলাকায় এগুতে থাকেন। এ সু্যোগে নাটুদা ক্যাম্পের পাক আর্মি পরিকল্পিতভাবে চতুর্দিকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। আটকা পড়ে বেশ কয়েকজন। আটজন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা হত্যা করে। বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অবশ্য এ সম্মুখ যুদ্ধে অনেক পাক আর্মিও হতাহত হয়। পাক আর্মির নির্দেশে রাজাকারেরা ০৮ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে পাশাপাশি দু’টি গর্ত করে কবর দেয়। পরবর্তীতে এর নামাকরন হয় আট কবর।
আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণ হচ্ছেন
শহীদ এই মুক্তিযোদ্ধাদের বন্ধু ও সহযোদ্ধা ছিলেন ছোলায়মান হক জোয়ার্দার (ছেলুন)। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনিই এই আট শহীদের কবর ও তাদের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। তার নিরলস প্রচেষ্টায় আট কবর এখন আধুনিকভাবে সংরক্ষিত। এ ছাড়া এটি এখন এ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।
আট কবর কমপ্লেক্স থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে বাংলাদেশর প্রথম রাজধানী মুজিবনগর অবস্থিত। এছাড়া এর খুব কাছেই রয়েছে জমিদার নফর পালের হাজার দুয়ারি ঘর আর তাঁর স্ত্রীর জন্য নির্মিত অপুরুপ ‘তালসারি সড়ক’।
রাজধানী ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে উভয়ভাবেই চুয়াডাঙ্গা যাওয়া যায়।
সড়কপথে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা
ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল হতে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায় প্রতিদিন।শ্রেনীভেদে এসব বাসে টিকেট মূল্য জনপ্রতি ৫৫০-৭৫০ টাকা। উল্লেখযোগ্য বাস সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে – পর্যটক পরিবহণ (01719-813004), স্কাই লাইন, পাবনা এক্সপ্রেস (02-9008581) এবং চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস।
রেলপথে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা
ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে চিত্রা, তূর্ণা ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন যমুনা সেতু হয়ে চুয়াডাঙ্গা যায়। শ্রেণীভেদে ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত জনপ্রতি ট্রেনের টিকেটের মূল্য ৩৯০ থেকে ১৩৯০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গা পৌঁছে শহর হতে সরারসরি বাস/লেগুনাতে করে আট কবর এ যাওয়া যায়। এছাড়া বাস/সিএনজি/অটো যোগে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাওয়া যায়। দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড হতে বাস/লেগুনা করে আট কবর এ যাওয়া যায়। এছাড়া আপনি চাইলে চুয়াডাঙ্গা থেকে অটো রিজার্ভ করে আট কবর সমাধিস্থলে যেতে পারবেন।
ভাড়া
চুয়াডাঙ্গায় বেশ কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যেখানে চাইলে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এসব হোটেলে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় রাতে থাকতে পারবেন। চুয়াডাঙ্গা শহরে অবস্থিত আবাসিক হোটেলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য – অন্তুরাজ আবাসিক হোটেল (076162702), হোটেল আল মেরাজ (076162383), হোটেল অবকাশ (076162288), হোটেল প্রিন্স (076162378)।
Leave a Comment